ভ্যানভর্তি লাশের স্তূপ, ডিবির সেই আরাফাত কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ২০:৫৪| আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ২০:৫৯
অ- অ+

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একটি ভ্যানে গুলিতে নিহত একাধিক লাশ স্তূপ করে রাখছে পুলিশ- এমন একটি ভিডিও শুক্রবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের ভেস্ট আর হেলমেট পরিহিত একজন ডিবি সদস্য ভ্যানের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন। তার মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

পুলিশ পরিদর্শক আরাফাতের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। বছর দুয়েক আগে তিনি ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। তার বাবা মো. আরিফ হোসেন বদরটুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘটনাটি ৫ আগস্ট বিকালের। ওইদিন আশুলিয়ার ওই স্থানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুল্লাহিল কাফী, যিনি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়েছেন।

ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি আরাফাত বলেই নিশ্চিত করে রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আরাফাত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

সেদিন আশুলিয়ায় গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদও উপস্থিত ছিলেন। তারা কোনো গুলি করেননি দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেদিন আমরা কোনো গুলি করিনি। অলিগলিতে হাজারো ছাত্র-জনতা আমাদের ঘিরে ফেলেছিল। তবে আমরা গুলি করিনি। আল্লাহর রহমতে ৫ আগস্ট আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলাম। নইলে আমাদেরকেও মরতে হতো।’

সেদিনের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকে জানান, গত ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরপর বাইপাইল এলাকার বিজয় মিছিল বের হয়। বিকালে উত্তেজিত জনতা আশুলিয়া থানা ঘেরাও করে। এসময় আশপাশে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে থানা ভবনে ঢুকে গেট বন্ধ করে দেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আন্দোলনকারীরা চারদিক থেকে থানা ঘিরে ফেলে ও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। কেউ কেউ গেট ভাঙতে এগিয়ে যান।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ আহমেদ পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র রেডি করতে বলেন। এতে আন্দোলনকারীরা আরও চড়াও হন। ওই সময় থানা ভবন থেকে বেরিয়ে এসে ৩০ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য থানার গেটে অবস্থান নেন। ওসি উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওসি পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র হাতে নিয়ে রেডি হতে বলেন। জবাবে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে আত্মসমর্পণ করতে বলে।

তখন ওসি সায়েদ আহমেদ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা হেরেছি। আপনারা জিতেছেন। আমাদের মাফ করে দেন। সবাই বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এর একপর্যায়ে এসআই মালেক, ডিবির ওসি (তদন্ত) আরাফাত, এসআই আফজালুল, এসআই জলিল ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান (থানা গলি)। মুহুর্মুহু গুলিতে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যান।

থানার সামনের বিল্ডিং থেকে পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রনি আহমেদ নামের এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেন, বিকালে থানা ফটকের সামনে উত্তেজিত জনতার ওপর পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে থানার গেটের সামনেই ১০ থেকে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। কয়েক মিনিট ধরে ওখানে গোলাগুলি চলে। পরে জীবিত কয়েকজনকে নিচু হয়ে এসে ছাত্ররা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। তারপরেও ৬ থেকে ৭ জন ওখানে পড়েছিল। তখন আশপাশের সব অলিগলি জনগণ ঘিরে ফেলে। রাস্তা থেকেও লোকজন থানার দিকে রওনা হয়। পরে থানা থেকে সব পুলিশ সশস্ত্র হয়ে একযোগে বেরিয়ে আসেন। তারা গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসেন।

তিনি আরও জানান, ভ্যানে লাশের স্তুপ করা জায়গাটি পলিমারস অ্যান্ড প্লাস্টিসাইজারস লিমিটেডের অফিসার ফ্যামিলি কোয়াটারের গেটে। ওই গেইটের অপরপাশে সাদিয়া রাজশাহী কনফেকশনারী এন্ড মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ফাহিমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি আমার দোকানের সামনেই ঘটেছে। বিকাল সাড়ে ৪টা হবে। সেদিন গুলি খেয়ে থানার সামনে পড়ে থাকা মরদেহগুলো ভ্যানে তুলছিলেন পুলিশ সদস্যরা। আমাদের চোখের সামনেই তুলেছে। প্রথমে লাশগুলো তুলে ব্যানার দিয়ে ঢেকে থানার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসে।

আশুলিয়া থানার সামনে ওইদিন প্রাণ হারানোদের মধ্যে ছিল মধ্য জামগড়া শাহিন স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসশাবুর। তার বড় ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে থানার পাশেই রাস্তায় পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তার নিথর দেহ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পিকআপে ঢুকিয়ে আগুন দিয়ে দেয়। ভাইটি আমার জীবিত ছিলো নাকি মৃত সেটা জানার সুযোগও আমাদের হয়নি। আমার ভাইয়ের গায়ে নীল গেঞ্জি ছিল। আমরা গেঞ্জি দেখে পোড়া লাশ শনাক্ত করি।

বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডের এক অটোরিকশা চালক বলেন, পুলিশ থানা থেকে মেইন রোডে এসে ডান-বাম দু’পাশেই গুলি চালায়। গুলি চালাতে চালাতেই তারা নবীনগরের দিকে এগোতে থাকে। তখন মানুষ জীবন বাঁচাতে যে যার মতো দৌড়ে পালিয়েছে। এক মিনিটের জন্যও পুলিশ গুলি বন্ধ করেনি। যতক্ষণ হেঁটেছে ততক্ষণই তারা গুলি ছুড়েছে। রাস্তার দু’পাশে পথচারী, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের শত শত মানুষ ওইদিন গুলিবিদ্ধ হয়। এমন দিন কখনো দেখেনি বাইপাইলবাসী।

জানা গেছে, আরাফাতের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে তিনি ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। তার বাবা মো. আরিফ হোসেন বদরটুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/এলএম/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যশোরে আদালত থেকে হ্যান্ডকাফ ভেঙে পালাল আসামি 
আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় মিছিলের চেষ্টা, ১১ নেতাকর্মী আটক
সাম্য হত্যার আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি জাবি ছাত্রদলের
ওয়াসার নতুন এমডি হলেন ডিএসসিসি প্রশাসক শাহজাহান মিয়া 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা