‘হ য ব র ল’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্য নেই, রেজিস্ট্রার নেই, প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডি নেই, হলে হলে প্রভোস্ট নেই; এমন চিত্র দেশের প্রাচীনতম ও শীর্ষ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদ থেকে সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও এ যেন ‘হ য ব র ল’ অবস্থা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে উত্তেজনার মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীশূন্য করা হয় আবাসিক হলগুলো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এখনো স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরেনি।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৮ আগস্ট প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সবাই পদত্যাগ করেন। ১০ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন। আগাম অবসরের জন্য আবেদন করেছেন রেজিস্টার প্রবীর কুমার সরকার।
এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্টরা পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগ করেছেন কলা অনুষদ এবং চারুকলা অনুষদের ডিনও। বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এবং পরিচালকদের পদত্যাগের জন্য এখনো দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকা রাখার অভিযোগে বিভাগে বিভাগে অনেক শিক্ষককে বয়কটের ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই কারণে সহপাঠীদের কাউকে কাউকেও বয়কট করা হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগে কালক্ষেপণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকট বাড়াচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় সেশন জটের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটি একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যারা আছেন, বিশেষ করে শিক্ষা উপদেষ্টাকে অতি দ্রুত অন্ততপক্ষে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। উপাচার্য নিয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে আগে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। অবশ্য আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম ছিল।’
আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শুন্যতা দ্রুত পূরণ না করলে এর একটা কিউমুলেটিভ ইফেক্ট পড়বে। ফলে যত দ্রুত এসব নিয়োগগুলো হবে, ততই একটা স্থিতিশীল সমাজ বিনির্মাণ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনেকটা অভিভাবকহীন। এই মুহুর্তে কতৃপক্ষ বলতে কেউ নাই। প্রায় ৪২টা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। এটা কাম্য নয়। বিষয়টা বিলম্বিত হচ্ছে৷ যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি অস্বস্তিতে আছে। নানা ধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে।’
উপাচার্য পদত্যাগ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বে বহাল রয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরাতো ভিক্টিম। আমি কোনো পথ দেখছি না। যারা উপদেষ্টা, তারা বোধহয় চাচ্ছেন জিনিসটা এরকমই থাকুক।’
তিনি জানান, ‘সাধারণত উপাচার্য যখন ছুটিতে যান, তখন অধস্তন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যান। যখন প্রেশারাইজ করে রেজিগনেশন দেওয়ানো হয়, তখনতো উনি কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেই এ কাজটি করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় কবে স্বাভাবিক হবে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এর কোনো উত্তর নাই। এর উত্তর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্যার বলতে পারবেন।’
(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/এসকে/এসআইএস)