দেশকে মিয়ানমারের মতো গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না, সরকারকে নুর

তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলসমূহের ডাকা ৯ম দফা অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
সোমবার দুপুরে পুরানা পল্টন আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে পল্টন মোড়, নাইটিংগেল মোড়, বিএনপি অফিস ঘুরে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড়ে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
২৮ অক্টোবরের পর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ১৮টি গুপ্ত হামলা ও ৪টি গুপ্ত হত্যা ঘটেছে। ৪ জন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অবৈধ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন ও গণগ্রেপ্তার করে দেশকে মিয়ানমারের মতো গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না। আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা সংঘাত নয় শান্তি চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
নুর জানান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে কারাগারে কনডেম সেলে রাখা হয়েছ। শুধু বিন ইয়ামিন মোল্লা নয় বিরোধী দলের সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিনিয়র অনেক নেতাকে কারাগারে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা লকআপে রেখে মানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছে, যেন তারা বের হয়ে রাজনীতি না করে।
কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে মন্তব্য করে নুর আরও বলেন, স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়েও ৩ গুণ বন্দিকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
কারা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে নুরুল হক বলেন, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকবে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। নাশকতার মামলায় জড়াতে পুলিশ ভয়-ভীতি দেখিয়ে গ্রেপ্তার বাণিজ্য করছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করছে।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, বিভিন্ন জায়গায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা বিএনপি- জামায়াতের রাজনীতি করে, তারা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বনেজঙ্গলে, পুকুর-বিলে মাচা তৈরি করে ঘুমাচ্ছে। যেমনিভাবে ’৭১ সালে এদেশের বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হায়েনারা আক্রমণ করত, আজকেও আওয়ামী লীগ রাজাকারের মতো মানুষকে নির্যাতন করছে, পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করাচ্ছে।
সারাদেশে আওয়ামী টুর্নামেন্ট চলছে, যেখানে কোনো প্রতিপক্ষ নেই। ‘আমরা আর মামুরা’ মিলে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির সাথেও আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে মন্তব্য করে রাশেদ খান আরো বলেন, জাতীয় পার্টি ১৪ সালের মতো আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিতে নির্বাচনে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কারও কারও নমিনেশন বাতিল করে সুবিধাভোগীদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করছে। এভাবে ১৪ সালের মতো ভারতের প্রেসক্রিপশনে আরেকটি তাঁবেদার সরকার গঠনের কাজ চলছে।
দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফাতিমা তাসনিম বলেন, নির্বাচন কমিশন জনগণের বিপক্ষে গিয়ে তফসিল জারি করে পরোক্ষভাবে এই অবৈধ সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা নয়, যেকোনো কৌশলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা। এর জন্য এই ইসি একদিন জবাব দিতে হবে।
সঞ্চালনা করেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনিম, আব্দুজ জাহের, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, রবিউল হাসান, জিলু খান, আনিসুর রহমান, সহ-নারী বিষয়ক সম্পাদক মীর দিলরুবা সুলতানা, যুব পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমসহ নেতাকর্মীরা।
(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন