রাজনৈতিক অস্থিরতার ছাপ দেশের অর্থনীতিতে
![](/assets/news_photos/2023/12/05/image-333957-1701749606.jpg)
নানামুখী চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কষ্টে আছে মানুষ। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি। সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ায় বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। এমন পরিস্থিতিতে সংকটে থাকা অর্থনীতি আরও সংকটের মুখে পড়ছে। অর্থনৈতিক এই মন্দায় বিনিয়োগে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ভরশীল। বর্তমানে অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। ডলার সংকটে এলসি করা যাচ্ছে না। কাঁচামালের অভাবে অনেক কারখানা পুরোপুরি উৎপাদন করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন কোনো অস্থিরতা দেখা দিলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এর পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের মতো আন্তর্জাতিক সংকটময় পরিস্থিতির প্রভাবও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংকটের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট যুক্ত হলে শিল্পোৎপাদন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডসহ সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে একটি বৈরী পরিস্থিতি চলছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ আছে। এসব কিছুর মধ্যেও দেশ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী গত বুধবার বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে ১৯.৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগে তা ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলার ছিল। তবে দায়হীন বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার (১০ হাজার কোটি টাকা) ছুঁয়েছে। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৯ বিলিয়ন ডলার। বাকি ২১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাত। বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে নেওয়া ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি। বাকি ১৬ শতাংশ বা ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ স্বল্পমেয়াদি। ঋণ জিডিপির অনুপাত ৪২.১ শতাংশ।
গত ১০ বছরেই বিদেশি ঋণ বেশি নেওয়া হয়েছে। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে এই ঋণ বাড়তে থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট বিদেশি ঋণ ছিল ৪৫.৮১ বিলিয়ন ডলার। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ৪ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে মোট ১১০ কোটি ১৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এ অর্থবছরের ৪ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ৩৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর এ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে ৩২৮ কোটি ডলার শোধ করতে হবে। আগের অর্থবছরে শোধ করতে হয়েছে ২৭৪ কোটি ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য মতে, আগামী অর্থবছরে আসল পরিশোধ করতে হবে ২৯০ কোটি (২.৯ বিলিয়ন) ডলার, যা এর পরের অর্থবছরে বেড়ে হবে ৩৩১ কোটি ডলার। ২০২৭ সাল নাগাদ এটা ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ভালো ইলেকশন হলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। এর জন্য একটা ভালো জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। ভালো নির্বাচন বলতে আমি সবার অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বোঝাতে চাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। আর যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশে একটা রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে। সামাজিকভাবে অস্থিরতা বিরাজ করবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থনীতি আরও দুরবস্থার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি, পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যাহত হয়। এরকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় উদ্বেগজনক হারে কমে। ফলে ডলার সংকট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা থাকে। রিজার্ভের পতনে নতুন গতি পায়, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই রাজনৈতিক সংঘাত অর্থনীতিকে বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে অন্য কোনো দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী দল ও বৈশ্বিক ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তাদের ক্রয় আদেশ এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো আরো সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল এলাকায় সরিয়ে নেয়। যখন একটি বড় বৈশ্বিক ক্রেতা একটি দেশ থেকে অর্ডার স্থানান্তর করে, তখন ছোট ক্রেতারাও তাদের অনুসরণ করে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে ২০ দিনের হরতাল ও অবরোধে আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। হরতাল ও অবরোধের কারণে দিনে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/বিবি
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/03/resize-90x60x0image-358347.jpg)
বেড়ার মেয়র আসিফ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, দেশ ছাড়লেন কীভাবে? কৌতূহল সর্বত্র
![](/cache-images/news_photos/2024/07/02/resize-90x60x0image-358194.jpg)
শিক্ষকদের পেনশনের টেনসনে স্থবির উচ্চশিক্ষা
![](/cache-images/news_photos/2024/07/01/resize-90x60x0image-358165.jpg)
কেরাণীগঞ্জে দেড় কোটি টাকার নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুর সন্ধান
![](/cache-images/news_photos/2024/06/30/resize-90x60x0image-357958.jpg)
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালুর উদ্যোগ কতটা গ্রহণযোগ্য? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/28/resize-90x60x0image-357767.jpg)
সর্বজনীন পেনশনে অনীহা কেন, যা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকনেতারা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/28/resize-90x60x0image-357765.jpg)
সাদিক অ্যাগ্রোর সবই ছিল চটক
![](/cache-images/news_photos/2024/06/26/resize-90x60x0image-357537-1719373181.jpg)
ঢাকা মহানগর বিএনপি ও যুবদলের কমিটি দিতে ধীরগতি যে কারণে
![](/cache-images/news_photos/2024/06/25/resize-90x60x0image-357433.jpg)
রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক: উপজেলা হাসপাতালগুলোতে নেই চিকিৎসা সক্ষমতা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/22/resize-90x60x0image-357190.jpg)
মাগুরায় বাড়ি-জমি উত্তম কুমারের: কোথাও খোঁজ নেই তার, দুদকের অনুসন্ধান সম্পন্ন
![](/cache-images/news_photos/2024/06/21/resize-90x60x0image-357067.jpg)