শাহজাহান ওমরের পক্ষে থাকবে না রাজাপুর আ.লীগ, ‍নীরব কাঁঠালিয়ার নেতৃবৃন্দ

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির (মাঝে) ডানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরের পক্ষে থাকছে না রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। আরেক উপজেলা কাঁঠালিয়ার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের পক্ষে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত দলের সাধারণ সভায় শাহজাহান ওমরের পক্ষে নির্বাচন না করার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে রেজুলেশন করা হয়।

অপরদিকে কাঁঠালিয়া আওয়ামী লীগও এখন পর্যন্ত শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ শুরু করেনি। তারা নৌকার পক্ষে কাজ করতে প্রার্থীর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ রয়েছেন। অনেকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

রাজাপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খাইরুল আলম সরফরাজ স্বাক্ষরিত রেজুলেশন সূত্রে জানা যায়, শাহজাহান ওমর নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলের সাথে যোগাযোগ করেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে আসেননি। ওমরের নিজস্ব বাসভবন যেটি বিগত দিনে বিএনপি অফিস ছিল সেখানে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীনতাবিরোধী, থানা শান্তি কমিটির সভাপতির ছেলে এবং থানা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারের ছেলে তার সাথে থাকছে।

রেজুলেশনে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে না নিয়ে নির্বাচন করা যায় না। উপস্থিত নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাহজাহান ওমর বিগত দিনে এ আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় তিনি তার প্রতিপক্ষ হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। নিরুপায় হয়ে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মনিরুজ্জামান মনিরকে নিয়ে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং তার পক্ষে নির্বাচন করার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রেজুলেশনে রাজাপুর উপজেলার ২৫ নেতাকর্মী স্বাক্ষর করেছেন।

এ প্রসঙ্গে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা ও রেজুলেশনের সিদ্ধান্তে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করা হলো কি না জানতে চাইলে সভাপতি খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির অপশন আছে এলাকায় দলীয় কোনো ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা থাকে সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু আমরা ওমর সাহেবের অপেক্ষা করে তাকে পাইনি। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নেমেছি। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে আমাদের অফিসে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির এসেছিলেন। আমরা তাকেও বিষয়টি অবহিত করেছি।’

ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের পাশে বসে আছেন। এমন একটি ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে পনিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম নৌকার মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান ওমরের অনুরোধে তার সাথে দেখা করতে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরও এসেছিলেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে কীসের রেজুলেশন। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মনিরের সাথে নির্বাচনি কোনো আলোচনা হয়নি। দলের সিদ্ধান্তের সাথে রেজুলেশনের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিষয়ে জানতে শাহজাহান ওমরের ফোন নম্বরে বারবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার নির্বাচনি সমন্বয়কারী ও মুখপাত্র ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাজাপুর আওয়ামী লীগের রেজুলেশন গুজব ও ভিত্তিহীন। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী। কারণ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তিসংগত নয়।’

ঝালকাঠি-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল সমাদ্দার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরুণ সিকদার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা নৌকা প্রার্থীর সঙ্গে নামতে পারিনি। তিনি এর আগে কাঁঠালিয়ায় এসে সভা করলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেখানে কেউ যায়নি। তখন তাকে সাংগঠনিকভাবে জানিয়েছিলাম আমরা তার সাথে কাজ করতে চাচ্ছি। কিন্তু তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যদি আমাদের না ডাকেন তাহলে আমরা কীভাবে যাই।’

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/পিএস)