নির্বাচনি সংঘাত বাড়ছেই, প্রাণ গেছে ৫ জনের  

মেহেদী হাসান, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৫

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে উত্তপ্ত ভোটের মাঠ। প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এ পরিস্থিতি প্রকট হয়েছে। ভোটারদের স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়েছেন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। এছাড়া বহু মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহতদের সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক।

এবার নির্বাচনে প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এতে করে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের উপর আক্রমণ, গুলিবর্ষণ, ভোটারদের মারধর, হুমকি-ধমকি, প্রচারণায় বাধা, নির্বাচনি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি বহরে হামলাসহ সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েছে সাড়ে পাঁচশ’র বেশি অভিযোগ। সংঘাতের বেশিরভাগ ঘটনাই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের কর্তৃক সংঘটিত।

আগামীকাল অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়। এর পর থেকেই মূলত প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

এ নিয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে সংঘাতে জড়িয়ে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন আসনে সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলি, নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন, হত্যার হুমকিসহ নানা রকম সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-১, ঝিনাইদহ-১, রাজশাহী-১, ২, ৪ ও ৫, নাটোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, বরিশাল-২, গাজীপুর-১, ২ ও ৩, খুলনা- ৫, নেত্রকোনা- ১, রংপুর-২, রাজবাড়ী-২, মানিকগঞ্জ-২, চট্টগ্রাম-১, ৩, ১২, ১৫ ও ১৬, শরীয়তপুর, মাদারীপুর-৩, ফরিদপুর-১, ৩, গোপালগঞ্জ-১, জয়পুরহাট-২, পাবনা-১, সিরাজগঞ্জ-৩, ৫ ও ৬, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা-১, খুলনা-৪, বগুড়া-১ ও ৪, কক্সবাজার-৪, মুন্সিগঞ্জ-৩, নরসিংদী-৫, কিশোরগঞ্জ-৫, চাপাইনবাবগঞ্জ-১, পঞ্চগড়-১।

১৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ-৪ আসনে অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে রফিকুল ইসলাম (৫২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর মাদারীপুরের কালকিনিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক এসকেনদার খাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনি জনসভায় বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের সমর্থক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই জনসভায় সিরাজ সিকদার (৫৮) নামে একজন নিহত হন।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত (৫১) ৪ জানুয়ারি সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন মুন্সীগঞ্জের নৌকা প্রার্থীর ৯-১০ জন সমর্থকের ওপর এলোপাথাড়ি শটগান দিয়ে গুলি করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রাণ হারান ডালিম সরকার (৩৫)। মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থক রিপন পাটোয়ারী ও ফরহাদ খাঁর নেতৃত্বে আমঘাটা থেকে লোকজন এসে এ হামলা চালায়।

ভোটের প্রচারে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, সহিংসতার ঘটনা আছে, তবে খুব কম।

এবার ভোটের প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তুলনামূলক কমই ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বুধবার পর্যন্ত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিগুলো মোট ৫৮৯টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তবে অনুসন্ধান কমিটিগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে; কিন্তু তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। কমিটিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয় ইসি। অবশ্য ইসি মনে করছে, এবার আগের তুলনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা কম।

সহিসংসতা থামাতে ও প্রার্থীদের আচরণবিধি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশন শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কাজটি করতে পারলে সংঘাত-সহিংসতা আরও কম হতো।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা ঘটেনি। যারাই সংঘর্ষে জড়িয়ে নিহত হয়েছেন পারিবারিক পূর্ব শত্রুতার জের ধরে। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২২৯টি।

এদিকে বরিশাল পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরিশালের নির্বাচনি জনসভায় অংশ নেওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই নির্বাচন ঘিরেই শাম্মী আহম্মেদ ও পঙ্কজ নাথ দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে বোতল ছুড়াছুড়ি ও হাতাহাতির ঘটনায় ১৮-২০ জন আহত হয়। আমরা তাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন তাদের একজন হার্ট এট্যাক করে মারা যান।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ পর্যন্ত বেশ নির্বাচন সহিংসতার ঘটনায় মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন হার্ট এট্যাকে মারা যান। কেউ অসুস্থ হয়ে মারা গেলে নির্বাচনি সংঘর্ষের ঘটনা বলা যাবে না। তবে এমন ঘটনা ঘটবে কেন এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচনি সহিংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন সব জায়গাতেই এমপি প্রার্থী বেশি হতে চাওয়ার কারণেই সহিংসতা ঘটেছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/এমএইচ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

রবিবার খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্লাস

থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

হাসিনা-থাভিসিন দ্বিপাক্ষীক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক: টিআইবি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

একযোগে আট বিভাগে সম্পন্ন হলো ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা

৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙছে তাপপ্রবাহ

তাপপ্রবাহে রেলের কর্মীদের জন্য ৫ নির্দেশনা

মানবসম্পদ উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :