দেশজুড়ে নিরাপত্তা বলয়, ঢাকায় ব্যাপক তল্লাশি

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৭ | প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১৭

রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। একদিকে জামায়াত-বিএনপির নির্বাচন কর্মসূচি অপরদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ।

বিরোধী বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতে চলেছে, যা এবারের প্রচার প্রচারণায় দেখা গেছে। এছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বিভিন্ন আসনে বেশ হেভিওয়েট হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে নেমেছেন। কিন্তু ভোটারদের অংশগ্রহণ কেমন হবে, ভোটাররা নির্ভয়ে অংশ নিতে পারবেন কি না সেই বিষয় নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে কড়া নিরাপত্তা দিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে টহল, চেকপোষ্টসহ সকল ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কাজ করছে পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্য, বিজিবি, র‍্যাব, এপিবিএন ও আনসার সদস্যরা। ইতোমধ্যে নানা শঙ্কা এড়াতে রাজধানীতে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তল্লাশি।

ভোট কেন্দ্র ও ভোটারের নিরাপত্তা এবং যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। অপরদিকে কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা হলে ফল ভালো হবে না বলে সতর্ক করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাব, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দুপুর ২টায় রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোষ্ট বসিয়েছে র‍্যাব। বিভিন্ন ব্যক্তিগত পরিবহন, মোটরবাইকসহ সন্দেহভাজন পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এছাড়াও চলাচলরত বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও দেখা গেছে। অনেকের সঙ্গে বহনকৃত ব্যাগও তল্লাশি করতে দেখা গেছে।

সন্ধ্যা ৭টার পর র‍্যাবের বেশ কয়েকটি ইউনিট রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে। গনপরিবহনে এমন তল্লাশির কারন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক র‍্যাব সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, নাশকতার জন্য অপরাধীরা যাতায়াতের বাহন হিসেবে গণপরিবহন ব্যবহার করছে এমন তথ্য রয়েছে।

র‍্যাব ১০-এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সেই দিকে নজর রাখছে র‍্যাব সদস্যরা। তারই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-১০ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়েছে। সেখানে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া দিন রাত ২৪ ঘন্টা র‍্যাব বিভিন্ন এলাকায় টহল দিয়ে আসছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে থেকেই রাজধানীর প্রবেশমুখে বিশেষ চেকপোস্ট, রোবাস্ট পেট্রোল মোতায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‍্যাব-৩।

র‍্যাব-৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে র‍্যাব-৩ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র‍্যাব-৩ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত চেকপোষ্টের পাশাপাশি রাজধানীর প্রবেশমুখে বিশেষ নিরাপত্তামূলক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া, দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোল মোতায়ন করা হয়েছে।

র‍্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে করা নিরাপত্তা পরিকল্পনার ছক একেছে র‍্যাব। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৩০টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করেছে তারা। এছাড়া, প্রতিটি নির্বাচনি আসনে দুটি করে মোবাইল টহল, ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আরও অতিরিক্ত দুটি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। র‍্যাবের ১০০টি টহল টিম রিজার্ভ রয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে স্পেশাল ফোর্স এবং ডগ স্কোয়াড।

ভোটকেন্দ্র ও এর আশপাশে বহিরাগতদের শনাক্ত করতে অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস) নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে র‍্যাব। যে কোনো স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও অপরাধী শনাক্ত করতে ওআইভিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সংস্থাটি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীতে মোট ২ হাজার ১৪৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অতিঝুঁকিপূর্ণ। কম ঝুঁকিপূর্ণ ৪৭৮টি কেন্দ্র। সেই হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েটে থানা পুলিশ ব্যপক তল্লাশি চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের বেশ কিছু চেকপোষ্টও লক্ষ করা গেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সরাসরি নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য ১ লাখ ৭৪ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা সবাই নিরাপত্তা দিতে ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে সারা দেশে ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোট কেন্দ্রে থাকবে ৯২ হাজার পুলিশ সদস্য। মোবাইল আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ২০ হাজার। ৫৬ হাজার পুলিশ সদস্য থাকবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে।

তথ্য বলছে, পুলিশের পাশাপাশি নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩ আনসার, ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি, ২ হাজার ৩৫০ কোস্টগার্ড ও র‍্যাবের ৭ শতাধিক টহল দল নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারা দেশে সর্বমোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ইতোমধ্যে ২৫০ প্লাটুন আনসার সদস্যরা ১ হাজারটি সেকশনে বিভক্ত হয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ হাজার ৮৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে মোট ১২ জন করে আনসার ও ভিডিপি সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ও একজন সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) এর নেতৃত্বে ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা ভিডিপি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

(ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/এইচএম/বিবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :