প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত না করে ভর্তি পরীক্ষা নয়: ছাত্র ইউনিয়ন

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত না করে সশরীরে ক্লাস চালু না করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতারা।
এক বিবৃতিতে বলা অদক্ষ প্রশাসনের খামখেয়ালিপনায় নিদারুণ সংকটে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের (৫২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) শাখা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের দপ্তর সম্পাদক সীমান্ত বর্ধন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়৷
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারেনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আবাসন সংকটের অজুহাত দেখিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে পাঠিয়ে প্রশাসন যে দায়সারা আচরণ করছে, তাতে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বরাতে যৌথ বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশপূর্বক উল্লেখ করা হয়, "বর্তমান প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতা চরম আকার ধারণ করেছে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের গণরুম-গেস্টরুমের নিপীড়নমূলক চর্চা অব্যাহত রাখতে কৃত্রিম সিট সংকটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠেলে দিয়েছে প্রশাসন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিট থাকা সত্ত্বেও, একদিকে সিট ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের কোনোরূপ অংশগ্রহণ না থাকায়, হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন সিটের রাজনীতিতে জিম্মি করছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের।"
এছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন চারটি হল প্রস্তুত থাকলেও, বারবার হল চালুর সময় পিছিয়েও হলগুলো চালু করছে না প্রশাসন। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে অপসারণের মাধ্যমে বৈধ শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন তার বাস্তবায়নেও কোনো সদিচ্ছা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে একদিকে ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে পূর্বের একাধিক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গণরুম-মিনিগণরুমে সীমাহীন দুর্ভোগে তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।"
যৌথ বিবৃতিতে নেতাকর্মীরা বলেন, প্রশাসনের এই অদক্ষ ও দায়সারা আচরণে বহুমাত্রিক সংকটের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের পরিবেশ। এমতাবস্থায় ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে বরণ না করেই আরও একটি ব্যাচের ভর্তিপরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের উপহাস হয়ে থাকবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমানে আবাসিক হলগুলোতে প্রায় ১০,৩০০ সিটের সংস্থান এবং বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাহিরে আবাসস্থল থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় সিট সংকট নিরসন করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে নতুন চারটি হল চালু করে কৃত্রিম সিট সংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তামাশা বন্ধ করার আহ্বান করছি। ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে বরণ করে নেওয়ার পূর্বে আরো একটি ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা শুরু করার প্রহসন পরিত্যাগ করতে এবং ভর্তি পরীক্ষার ফরমের মূল্যবৃদ্ধির মুনাফালোভী প্রবণতা থেকে সংযত হতে সতর্ক করেন নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সকল স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ থেকে ২২ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হয়। কিন্তু প্রায় সাত মাস পরেও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়াদের সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে গত নভেম্বরের শেষে ঐ ব্যাচের অনলাইনে ক্লাস চালু হয়।
এর মধ্যে, বুধবার (১০ জানুয়ারি) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এক ব্যাচের সশরীরে ক্লাস শুরু না করেই নতুন ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
(ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/এআর)
মন্তব্য করুন