ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ইভ্যালির রাসেল বক্তব্য দিলেন আলোচনা সভায়

চেক জালিয়াতির একটি মামলায় সোমবার ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মো. রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। তবে ওই পরোয়ানাভুক্ত আসামি রাসেল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন। অবস্থান করেন দুই ঘন্টার বেশি সময়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।
তবে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ওয়ারেন্ট তামিলের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. মাহফুজুল হক ভূঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো হাতে পাইনি। পেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ। এছাড়াও মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দারের আদালত চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো হাতে পাইনি। পেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ইভ্যালির রাসেল বলেন, শুধুমাত্র ইভ্যালির বিরুদ্ধেই ভোক্তাদের সাড়ে ৬ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগুলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আমলে না নিয়ে মহাপরিচালক মহোদয় তা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
রাসেল আরও বলেন, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে ভোক্তার মহাপরিচালক আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে যে সৎ সাহস দেখিয়েছেন আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনুষ্ঠানে ই-ক্যাবের সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াহেদ তামাল বলেন, অনেকেই প্রস্তাব করেন ই-কমার্সের আইন করার জন্য। এ বিষয়ে অনেকগুলো আইন রয়েছে। ভোক্তা অধিকারে যেই পরিমাণ অভিযোগ পরে তা যদি অটোমেটেড সমাধান করা হয় তাহলে অভিযোগের মাত্রা কমে আসবে।
তিনি বলেন, ই-কমার্স নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কয়েক বছর ধরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, ই-কমার্স খাত বাংলাদেশে একটি নতুন খাত। বাংলাদেশের সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্ট দেশ গড়া, সেই ক্ষেত্রে ই কমার্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে ই-কমার্সের অনেক কার্যক্রমে জনগনের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। সেই ভোগান্তি যেন আর না হয় সেই জন্য সরকার কাজ করছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যখন আমরা ই-কমার্স নিয়ে কাজ করতে থাকি তখন অলরেডি রাসেল সাহেব অ্যারেস্ট, এমন অনেকেই অ্যারেস্ট হলো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। তাদের ব্যাংকের টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। এমন সময় আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল যখন ই-কমার্সের করুন অবস্থা।
তিনি বলেন, আমাদের নেক্সট বিজনেস কিন্তু ই-কমার্স বিজনেস। আমাদের এই বিজনেসটাকে ধরে রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত ২০২১ সালের ১৩ মার্চ তানভীর হোসেন নামের একজন ক্রেতা বিজ্ঞাপন দেখে ৪৫ দিনের মধ্যে ইভ্যালির পণ্য সরবরাহের শর্তে একটি মোটরসাইকেল কেনা বাবদ দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যটি ইভ্যালি না দিয়ে ৬ মাস পর ১৩ সেপ্টেম্বর ইভ্যালি পণ্যের সমমূল্যের একটা চেক প্রদান করেন।
চেকটি নগদায়নের জন্য একাধিক ব্যাংকে জমা দিলে তা ডিজঅনার হয়।
এ বিষয়ে ইভ্যালি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় শামীমা নাসরিন ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী। সেই মামলায় বর্তমানে পলাতক আসামি ইভ্যালির রাসেল প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ইভ্যালির চটকদার অফারের প্রলোভনে অনেকেই বিভিন্ন অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন। তবে কিন্তু মাসের পর মাস এবং বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি। ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি। গ্রাহকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে ইভ্যালি।
(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/এইচএম/এসআইএস)

মন্তব্য করুন