'হেনস্তার' অভিযোগে পদত্যাগ, বিভাগীয় প্রধান বলছেন পদের মেয়াদই নেই

এমদাদুল হক, কুবি
| আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৯ | প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:১৩

দায়িত্ব পালনকালে এক শিক্ষক কর্তৃক 'হেনস্তার' শিকার হওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী সংগঠন লিবারেল মাইন্ডসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সংগঠনটির লিবারেল মাইন্ডসের কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২৩ এর সভাপতি মো. আনোয়ার আজম। তবে বিভাগটির হেড অব দ‍্য ডিপার্টমেন্ট অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলছেন, পদত্যাগপত্র দেয়া ব্যক্তি সভাপতি পদের মেয়াদ নেই। নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।

গত ২৯ জানুয়ারির তারিখ উল্লেখ করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আনোয়ার আজম বিভাগের সহযোগী সংগঠন লিবারেল মাইন্ডসের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি পদত্যাগ পত্র দেন মো: আনোয়ার আজম। সেই পদত্যাগ পত্রের অনুলিপি মোট পাঁচ জনকে দেয়া হয়েছে।

তারা হলেন- ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, লিবারেল মাইন্ডস কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক।

পদত্যাগ পত্রে বলা হয়েছে, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্যারের নির্দেশনায় আমি (সভাপতি) এবং আমার কমিটির সহ সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন (আবির) ও সেক্রেটারি মো. নয়ন মিয়া বিভাগের সেমিনার রুমে বসে দুপুর দেড়টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই এবং তালিকা তৈরির কাজ করছিলাম। একটুপর সেক্রেটারি নয়ন ছোট একটা কাজে রুমের বাহিরে যায়। এরই মধ্যে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন সুলতানা ম্যাম এবং ইসরাত জাহান নিমনি ম্যাম সেমিনার রুমে প্রবেশ করেন। তখন শারমিন ম্যাম আমাকে দেখেই হঠাৎ ক্ষেপে যান এবং বিনা কারণে বকাঝকা ও ধমকাতে থাকেন। সেমিনার রুমের একটি চেয়ারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'তুমি চেয়ারম্যান হয়ে গেছো নাকি? তুমি ঐ চেয়ারে কী করো?' তখন আমি বললাম, 'ম্যাম, আমিতো ওটাতে বসিনি। ওই চেয়ারটা পাশে সরানো আছে' (যদিও সেমিনার রুমে চেয়ারম্যানের জন্য নির্দিষ্ট করা কোনো চেয়ার ছিলো বলে আমার জানা নেই)। এরপর উত্তপ্ত হয়ে তিনি আবার বলেন, 'তুমি এখানে কী করো? তোমার তো ছাত্রত্ব শেষ।' আমি বললাম, 'ম্যাম এগুলো ক্লাবের কাজ। আর এটা আমার দায়িত্ব। এছাড়া, ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আমার ছাত্রত্ব আছে।' এরপরও তিনি আমাকে ধমকাতে ধমকাতে বললেন, 'এখানে (নির্বাচনে) কেনো তুমি ইন্টারফেয়ার করবে? তোমার লজ্জা করে না? এখানে কেন আসবে?' এছাড়া আরও অকথ্য ভাষায় তিনি আমাকে অপমান করতে লাগলেন।

শিক্ষক হয়েও ওনি যেহেতু যুক্তি বা অধিকারের বাহিরে গিয়ে যা তা বলে যাচ্ছেন; তখন বুঝতে পারলাম, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তিনি সেমিনার রুমে এসেছেন এবং হেয় প্রতিপন্ন করতে আমাকে বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন। এমতাবস্তায় আর কোনো উত্তর দেওয়া সমীচীন হবে না মনে করে চুপ করে, ধৈর্য সহকারে নিশ্চুপ শুনে গেলাম। ওনার এসব আচরণ খেয়াল করে সেক্রেটারি নয়ন বাহির থেকে আর রুমে প্রবেশ করার সাহস করেননি।

ব্যক্তিগত আক্রোশ, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই হয়তো তিনি এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে আমি ধারণা করছি। বিষয়টি আমি তৎক্ষণাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্যারকেও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। বিভাগের একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথেও এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ গ্রহনযোগ্য নয় বলে আমি মনে করি।

পদত্যাগ পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, 'শুধুমাত্র ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করার কারণেই শারমিন সুলতানা ম্যাম অন্য একজন শিক্ষক এবং জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সামনে আমার সাথে যে ধরনের মানহানিকর বাজে আচরণ করেছেন; আমি তাতে খুবই বিব্রত এবং অপমানিতবোধ করছি। আমি এত বছর ধরে বিভাগে কাজ করেও বিদায়ী মুহুর্তে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপমানসুলভ আচরণের শিকার হওয়ায় খুবই ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন। এভাবে চলতে থাকলে কমিটির সদস্যরা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং শিক্ষার্থীরাও ক্লাবে নিজেদেরকে আর সম্পৃক্ত করবে না। অতএব, উক্ত বিষয়ে আপনার এবং বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি লিবারেল মাইন্ডসের সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি; এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।'

এ ব্যাপারে পদত্যাগ পত্র জমা দেয়া মো: আনোয়ার আজম বলেন, 'আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতেছিলাম তখন ম্যাম রুমে প্রবেশ করে, আমার সাথে এমন আচরন করে। আমি ক্লাবের রানিং দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমার সাথে এমন খারাপ আচরন আমি মেনে নিতে পারিনি। একজন সিনিয়র শিক্ষার্থী হিসেবে এইটা আমি প্রত্যাশা করি না। আমার কাছে খুবই অপমানজনক লাগছে, তাই আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।'

সভাপতি পদের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, '৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমার পদের মেয়াদ আছে। আমার পদ ঠিকই আছে।'

এ ব্যাপারে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন সুলতানা বলেন, লিবারেল মাইন্ডসের ইলেকশন কমিটিতে আমি জড়িত নেই। নির্বাচন প্রক্রিয়া কমিটিতে কোনো ভাবে আমি অফিসিয়ালি নেই। পদত্যাগকারী ছেলেটি যে ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে সেদিন সেমিনার রুমে বই আনতে গিয়ে তার (মো: আনোয়ার আজম) সাথে আমার অল্প কিছুক্ষন কথা হয়। এরপর সে বের হয়ে যায়। ফলে তার সাথে দুর্ব্যবহারের কোন প্রশ্নই আসে না। সেমিনার রুমের আলমারি তালাবদ্ধ থাকায় আমি ঘটনাস্থলে থাকা আবিরকে বকাঝকা করেছিলাম। কারন শিক্ষার্থীদের টাকায় বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থীকে সেমিনার রুমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কেন এরকম সময় জ্ঞানহীন শিক্ষার্থীদের সেমিনারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে জন্য আমি আবিরকে বকাঝকা দিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রচন্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার পক্ষে ক্লাসের দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই ছেলেটা প্রচন্ড মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এই অবস্থায় ক্লাসে স্টুডেন্টদের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব না।'

এ ব্যাপারে লিবারেল মাইন্ডস কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহা: হাবিবুর রহমান বলেন, ' পদত্যাগ পত্রে ও যা উল্লেখ করেছে তা সব মিথ্যা, বানোয়াট। আমি তাকে কিছুই করতে বলিনি।'

এ ব্যাপারে ইংরেজি বিভাগীয় হেড অব দ‍্য ডিপার্টেমেন্ট অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, 'শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একজন ছাত্র যেভাবে শিক্ষকের নামে অভিযোগ দিলো তা দুঃখজনক। আমরা তাকে সময় দিয়েছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে বসার জন্য। কিন্তু সে কোন কথাই শুনেনি। শেষ সময়ে এসে এভাবে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অমূলক অভিযোগ দিয়ে সে আসলে কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে সেই ভালো জানে। এইরকম ঘটনার পর শিক্ষকরাও একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে আগ্রহ পাবে না। ইতোমধ্যে আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মী এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।'

(ঢাকাটাইমস/০১ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :