পায়ুপথে স্বর্ণ পাচারের চেষ্টা, পেট্রাপোল বন্দরে তিন বাংলাদেশি আটক

যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে ফের ধরা পড়লো স্বর্ণের চালান। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এক কেজি ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ তিন বাংলাদেশিকে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের ১৪৫ ব্যাটালিয়ন এক বার্তায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বেনাপোল কাস্টমস পেরিয়ে ওপারে গেলে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস ইমিগ্রেশনে বিএসএফ সদস্যদের হাতে তারা আটক হয়।
বিএসএফ জানিয়েছে, ওই তিন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ কাস্টমস পার হয়ে পেট্রাপোল চেকপোস্টে আসার পর গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাদের শরীর ও ব্যাগ স্ক্যানিং করা হয়। একপর্যায়ে তাদের পায়ুপথে সোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরে তাদের পায়ুপথ থেকে ১০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার বাজার মূল্য ৬৫ লাখ রুপি।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর তাদেরকে ভারতের বনগাঁ মহকুমার পেট্রাপোল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- শরীয়তপুরের চিকান্দী উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের রাজ্জাক মুন্সীর ছেলে আবু বক্কর মুন্সী, ঢাকার ওয়াদালোদী তুরাগ এলাকার রুস্তম শেখের মেয়ে পারভীন আক্তার (৪৪) ও মানিকগঞ্জ সদর এলাকার তারা গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৬)।
এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আড়াই কেজি ওজনের ২২টি স্বর্ণের বারসহ আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক চালক রাজু দাস ও সঞ্জীব দাসকে আটক করে বিএসএফ। একই দিন পাসপোর্টধারী যাত্রী রিবা উদ্দিনকে তিনটি স্বর্ণের বারসহ আটক করা হয়।
এ ছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮৫০ গ্রাম ওজনের সোনার বারসহ আবু বক্কর হানিফা ও জিয়া উদ্দীন নামে দুই ভারতীয় পাসপোর্টধারীকে আটক করে বিএসএফ। এ ঘটনার তিনদিন আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি নাজরীন নাহার নামে এক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী পায়ুপথে লুকিয়ে পাচারের সময় চার পিস স্বর্ণের বারসহ আটক হন।
ভারতের ২৪ পরগনা সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের পাবলিক রিলেশন্স অফিসার ডিআইজি শ্রী এ কে আর্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বিএসএফ সদস্যরা কোনো অবস্থাতেই সীমান্তে চোরাচালান বা অন্য অপরাধ ঘটতে দেবে না। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও ছাড় দেবে না।
জানা গেছে, কাস্টমসের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে স্বর্ণ পাচারের‘গোল্ডেন রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। তবে সোনা নিয়ে নির্বিঘ্নে বেনাপোল পার হয়ে গেলেও পেট্রাপোলে গিয়ে প্রায়দিনই ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা।
তবে পাচার রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশ কাস্টমসের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, কাস্টমসের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সখ্যতা থাকতে পারে। ফলে স্ক্যানিং মেশিন মেরামত বা যাত্রীর তল্লাশিতে অনীহা রয়েছে তাদের। স্বর্ণের চালান বাংলাদেশে ধরা না পড়ে ভারতে কীভাবে ধরা পড়ছে? এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চারটি স্ক্যানিং মেশিন ও একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন করে। পণ্য পরিবহনে অত্যাধুনিক মেশিনটি রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেল স্টেশনে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন-কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে স্থাপন করা তিনটি স্ক্যানিং মেশিনগুলো যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ায় গত চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। কাস্টমসের পক্ষে মেশিনগুলো পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। এ সুযোগে পাসপোর্টধারী যাত্রীর মাধ্যমে চোরাচালান ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতেও অনেকে জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালানে।
স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ব্যবস্থাপক বনি আমিন বলেন, স্ক্যানিং মেরামত করতে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। চুক্তি অনুযায়ী কাস্টমস তার ব্যয় বহন করার কথা থাকলেও, এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্ক্যানিং মেশিন তিনটির কার্যক্রম বন্ধ আছে।
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন