দেশপ্রেমিক দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর: উপাচার্য ড. মশিউর রহমান
দেশপ্রেমিক দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হলো মানচিত্রসম। এটি বাংলাদেশের সেই প্রতিষ্ঠান যেটি ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থীকে ধারণ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের পথে আছি। সেই শিক্ষা আন্দোলনের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নেতৃত্ব দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় যে ইতিহাস বিকৃতির পথে বাংলাদেশ হেঁটেছিল সেই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আর কোনো বিশ^বিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে অবশ্যপাঠ্য করেছে।’ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বার্ষিক ‘প্রীতি সম্মিলন ২০২৪’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তৈরি করি। পৃথিবীর যেখানেই থাকুক মা, মাটি ও মাতৃভূমিকে ভালোবাসবে এই শিক্ষা আমরা ক্লাসরুমে দেই। আমি অকপটে স্বীকার করি আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে, প্রতিবন্ধকতা আছে। আমি বলছি না জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু আমাদের প্রতিটি কর্মী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিরলসভাবে মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে জেগে কাজ করছেন। কোনো কিছুর আশায় নয়, কমিটমেন্ট এর জায়গা থেকে তারা কাজ করছেন। সেই কমিটমেন্ট থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। আমাদের প্রস্তুতির মধ্যে ঘাটতি বা অস্বচ্ছতা রেখে এগোচ্ছি না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাহসের সঙ্গে বলতে পারে প্রতিটি পয়সা আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করি।’
কর্মমুখী ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আইসিটিকে অবশ্যপাঠ্য ঘোষণা সর্বাগ্রে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য সফ্টস্কিল, অন্ট্রাপ্রেনারশিপ জাতীয় কোর্সকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ১২টি দক্ষতাভিত্তিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি) প্রোগ্রাম এবং ১৯টি শর্ট কোর্স প্রবর্তন করেছি। আমাদের আইসিটি মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত। আগামীর পথ চলায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে যতো প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে নিজ আদলে গড়ে তুলবে। আমরা অন্য কোনো সংস্কৃতিকে ধারণ নয়, বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীন করা মানচিত্রসম প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ দায়িত্ব।’
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে কখনো কখনো অপপ্রচার হয়। ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব যখন আমরা করি তা দায়িত্ব নিয়েই করি। আমি আহ্বান জানাব-জাতীয় বিশ্বাবিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে জানুন। প্রশ্ন করুন। জেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন। আমরা যেকোনো কিছুর জবাব স্বচ্ছভাবে দিতে সদা প্রস্তুত। এই প্রিয় প্রাঙ্গণকে সবাই মিলে গড়ে তুলেছি একটি অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আগামী দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সুউচ্চ মহিমায় পৌঁছাবে তাতে আপনারা প্রত্যেকে গর্ব করতে পারবেন।’
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, ‘আপনারা এখন যে কঠোর পরিশ্রম করছেন তার মাত্রা প্রয়োজনে আরও বাড়াতে হবে। তবুও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের পবিত্র অঙ্গীকার। আসুন এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে দেশমাতৃকার সেবার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। পাওয়া না পাওয়ার বেদনা থাকবে। কিন্তু অন্যকে সেবা প্রদান ও মানবতার মধ্য দিয়ে যে ভিন্ন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে সে বাংলাদেশ আগামী দিনে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে। আমি বিশ্বাস করি, আজকে আমার ক্লাসরুমে যে জীর্ণ-শীর্ণ শিক্ষার্থী থাকে সে আগামী দিনে বাংলাদেশ পাল্টে ফেলবে। আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী আগামী দিনে বিশ্ব নাগরিকে পরিণত হবে।’ প্রীতি সম্মিলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। দিনব্যাপী প্রীতি সম্মিলনে স্মৃতিচারণ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। সারাদিন আনন্দঘন পরিবেশে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এআর)