গৌরবের ১০৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে দিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৬| আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩
অ- অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ ১ জুলাই ১০৫ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৯২১ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিদ্যাপীঠ দেশের জ্ঞান, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে। আজকের দিনটি উদ্‌যাপন করতে বর্ণিল সাজে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মুখেও বইছে উৎসবের আমেজ।

পূর্ববঙ্গের অবহেলিত জনগণের শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই ছিল বাঙালির আত্মবিকাশের কেন্দ্র। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার ও সরকার পতন আন্দোলনের সূতিকাগারও এই বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে গৌরবের এই দীর্ঘ পথচলায় নানা কাঠামোগত সংকট ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা ও প্রযুক্তির ঘাটতিও রয়েছে দৃশ্যমানভাবে। সদ্য ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।

তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২৫’-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উঠে এসেছে ৫৮৪তম অবস্থানে—যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এখন সময় এসেছে প্রযুক্তিনির্ভর গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার।” তিনি আরও জানান, রাজনীতিকে শিক্ষার পথে অন্তরায় না করে বরং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যবহার করার প্রত্যাশা তার।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এখন প্রয়োজন মুক্ত, সৃজনশীল ও গবেষণাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। তারা চান আধুনিক ল্যাব, সময়োপযোগী পাঠদান, মানসম্মত আবাসন ও পর্যাপ্ত বাজেট। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “রাজনীতির ভয় নয়, চাই জ্ঞানের আধিপত্য। গেস্টরুম নয়, গ্রন্থাগার হোক আমাদের নির্ভরতা।”

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা

‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচিতে উপাচার্য কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ঘিরে সাজসজ্জা উদ্বোধন করেন সকাল ১০টায়। এরপর হয় শোভাযাত্রা, পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা ও আলোচনাসভা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে যান চলাচল সীমিত করে বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।

প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ইতিহাসে অমলিন। এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি আশা করি, এই প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতেও বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা দিয়ে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে নেতৃত্ব দেবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪ বছরের পথচলা কেবল এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, এটি এক জাতির জাগরণের ইতিহাস। নতুন শতকে পা দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় আজও অগ্রণী ভূমিকায়, তবে সামনে পথ অনেক দীর্ঘ। শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ধ্বনিত হওয়া প্রত্যাশাই যেন নতুন অধ্যায়ের সূচনার বার্তা—একটি গবেষণাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও রাজনীতিমুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

(ঢাকাটাইমস/১ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নোয়াখালীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক ৪, আগ্নেয়াস্ত্র-স্বর্ণ উদ্ধার
দেশে সংকট হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পথ দেখায়: দুদু
ঘুমন্ত নগরী
জুলাই মাসেই জুলাই সনদ প্রকাশ করতে হবে: রাশেদ প্রধান 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা