হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার ৯ বছর, ভয়াল স্মৃতির দিনটি আজ

আজ ১ জুলাই স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা—গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ৯ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৬ সালের এই দিনে রাজধানীর অভিজাত কূটনৈতিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংঘটিত হয় বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, যা গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
সেদিনটি ছিল পবিত্র রমজানের এক সন্ধ্যা। গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ধ্যার পর দেশি-বিদেশিরা একত্রে সময় কাটাচ্ছিলেন। রাত ৯টার দিকে একদল সশস্ত্র জঙ্গি ঢুকে পড়ে রেস্তোরাঁয়। তারা বিদেশি নাগরিকদের খুঁজে বের করে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এই হামলায় প্রাণ হারান ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ২ জন পুলিশ কর্মকর্তা। রাতভর জিম্মি অবস্থার পর সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’-এ পাঁচ জঙ্গিকে হত্যা করে ভবন নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।
ঘটনার পর গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী মামলা হয়, তদন্ত করে সিটিটিসি। চার বছরের তদন্ত শেষে আটজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়। তবে আদালত বড় মিজানকে অব্যাহতি দেন এবং বাকি সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর।
২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে বলেন, “হামলাটি ছিল নৃশংস, জঘন্য এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এই অপরাধের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ডই ন্যায্য।”
আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো— রাকিবুল হাসান (রিগ্যান), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (রাজীব গান্ধি), আসলাম হোসেন, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান (সোহেল মাহফুজ), মামুনুর রশীদ (রিপন) ও শরিফুল ইসলাম (খালেদ)।
হামলার দুই বছর পর ধ্বংস করা হয় ওই বাড়ি। প্রবেশপথে নির্মাণ করা হয় শোকবেদী। প্রতি বছর এই দিনে নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিদেশি দূতাবাসগুলো।
হলি আর্টিজানের সেই রাত শুধু একটি ঘটনার স্মৃতি নয়, বরং গোটা জাতির জন্য এক বেদনাবিধুর অধ্যায়। জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে এটি ছিল একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। সেদিন দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গোয়েন্দা তৎপরতা ও জাতীয় ঐক্যের শক্ত পরীক্ষা হয়েছিল।
আজ ৯ বছর পরও, জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে সেই ভয়াল রাতের শহীদদের এবং প্রত্যাশা করছে এমন জঘন্য ঘটনা আর কখনো যেন বাংলাদেশে না ঘটে।
(ঢাকাটাইমস/১ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন