রওশনের জাতীয় পার্টিতে শুরুতেই অস্থিরতা

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:১২

জাতীয় পার্টি গত ৯ মার্চ সপ্তম বারের মতো ভেঙেছে। এবার একাংশের নেতৃত্বে আছেন খোদ প্রয়াত এরশাদপত্নী রওশন এরশাদ। এতে সারা দেশে পুরো জাতীয় পার্টিতে ঝড় উঠলেও ৪৮ ঘণ্টা না পেরুতেই এই খণ্ডিত অংশে বইছে ঝড়ের হাওয়া।

জিএম কাদেরের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের খোঁজখবর না নেওয়ার অভিযোগে নেতারা রওশন এরশাদের দিকে ধাবিত হলেও স্থির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না নেতারা। এমনটিই ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন রওশনপন্থি জাপার একাধিক নেতা।

মূলত, গেল শনিবারে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনেই গৃহবিবাদের সৃষ্টি হয়। আর এই বিভেদ সৃষ্টির কারিগর ছিলেন জিয়াউল হক মৃধা। এই মৃধা জিএম কাদেরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার শ্বশুর। অন্যদিকে এই মৃধাই জিএম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে হাইকোর্টে রিটও করেছেন।

সূত্র মতে, শনিবারের কাউন্সিলে যখন চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এবং মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণার পরপরই মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসে পার্টির অন্যান্য কো-চেয়ারম্যানদের নাম। এমন সময় প্রকাশ্যেই বেঁকে বসেন জিয়াউল হক মৃধা। একপর্যায়ে তাকে (মৃধা) কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা না করলে এই কাউন্সিল মানি না বলে সম্মেলনস্থলেই হট্টগোল বাঁধান তিনি। আয়োজক রওশন অনুসারীরা তখনকার পরিবেশ শান্ত করার জন্য মৃধার নামও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হন।

এ বিষয়ে রওশনপন্থি জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, জিয়াউল মৃধা আমাদের কাউন্সিলের দিন রীতিমতো ব্লাকমেইল করেছেন। তিনি কখনও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যও ছিলেন না। শুধু রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার শ^শুর হওয়ার সুবাদে তিনি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তাকে কেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান করা হবে?

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির অপর কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও সেদিনের কাউন্সিল শুরু হওয়ার সাথে সাথে চলে যাওয়ায় তাকে নিয়েও শুরু হয় গুঞ্জন। অনেকে বলছেন, বাবলা রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। তা না দেওয়ায় তিনি সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। যদিও সৈয়দ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এ কথার কোনো সত্যতা নেই বলে ঢাকা টাইমসের কাছে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। কাউন্সিলের দিন সকালে আমার বুকে ব্যথা ওঠায় আমি তাৎক্ষণিক গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হই।

নবগঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সেন্টুও কাউন্সিলের ৪৮ ঘণ্টা না পেরুতেই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

রওশনপন্থি জাপা সূত্র জানায়, কাউন্সিলের আগের দিন রাত পর্যন্ত ১ নং কো-চেয়ারম্যান হিসেবে সেন্টুর নাম থাকলেও কাউন্সিলে ১ নং কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জাপার জিএম কাদেরের অনুসারী সাহিদুর রহমান টেপার নাম দেখে বিস্মিত হন সেন্টু। পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করে এর কারণ বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন সেন্টু।

এছাড়া দীর্ঘ প্রায় তিনবছর রওশন এরশাদের সাথে সক্রিয় থাকা অনেক সিনিয়র নেতা বয়কট করেছেন এ সম্মেলন। এদের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসিহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, এসএমএম আলম, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু প্রমুখ।

এ বিষয়ে জাপার (রওশন) কো-চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন ঢাকা টাইমসকে বলেন, স্বাস্থ্যগত কারণে সেন্টু পদত্যাগ করেছেন তা গৃহীত হয়নি। তার অভিমান বা কষ্ট থাকতে পারে তা আমি জানি না। তিনি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয়ত, মৃধা সাহেবকে মহাসচিব এবং নির্বাহী চেয়ারম্যানের নির্দেশে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তা দলের প্রেসিডিয়াম সভায় অনুমোদন হতে হবে। তৃতীয়ত, গোলাম মসিহ একজন সফল কূটনীতিক। আর প্রফেসর দেলোয়ার একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ। ভবিষ্যতে আমরা তাদের পাশে পেতে চাই। আগামীতে জিএম কাদেরের অনেক কাছের লোক আমাদের এখানে যোগদান করবেন, অপেক্ষা করুন।

জাতীয় পার্টিতে এরকম অন্তর্কোন্দল নতুন কিছু নয়। রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এমনকি এরশাদ জীবিত অবস্থাতেও প্রকট ছিল। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে বিরোধী দলের নেতার পদ পেয়ে জি এম কাদেরকে জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। তবে তিন বছর পর সে সমঝোতা ভেঙে যায়।

জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন রওশন এরশাদ। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেন জিএম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে নিজ পদে টিকে যান রওশন। পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সে সমঝোতাও ঠিকঠাক কাজ করেনি। রওশন ও কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব নানাভাবেই চলতে থাকে। জানুয়ারির শেষ দিকে জিএম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপা চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। গত ৯ মার্চ পার্টির অনুসারীদের নিয়ে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল করেন তিনি। কাউন্সিলে রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদ নির্বাহী চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদ মহাসচিব নির্বাচিত হন। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে। আর কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন ও সুনীল শুভরায়।

(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/এআর/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

ফারাক্কা দিবসের অঙ্গীকার- যৌথ নদী রক্ষায় সোচ্চার হোন: বাংলাদেশ ন্যাপ

অসুস্থ তাঁতীদল নেতা রেজাউল করিমকে দেখতে গেলেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

জাপাকে বিক্রি করে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা হয়েছে: কাজী মামুন

আ.লীগই ষড়যন্ত্র করে: সালাম

দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের কিছুই অবশিষ্ট নেই: জামায়াত

ডোনাল্ড লু প্রসঙ্গে বেশি কথা বলতে চান না মির্জা ফখরুল

বিএনপির আরও পাঁচ নেতা বহিষ্কার

ইসরায়েলি লবির সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি: হাছান মাহমুদ

ডোনাল্ড লু'র আগমনে সরকার ভীত: ববি হাজ্জাজ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :