জাবি অধ্যাপক তারেক চৌধুরীর গবেষণা জালিয়াতিতে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৪৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. তারেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে গবেষণা জালিয়াতি ও অশোভন আচরণের অভিযোগ আমলে নিয়েছে সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

‘ঈশ্বরের স্বরূপ প্রসঙ্গে ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি ব্যাপক হারে জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই গবেষণা প্রবন্ধ ব্যবহার করে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নিত লাভ করেন।

প্রবন্ধটি ২০১১ সালে দর্শন বিভাগের কপুলা জার্নালে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলামের ‘পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস: থেলিস থেকে হিউম’ গ্রন্থ থেকে ব্যাপক হারে চুরি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ।

অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক সদস্যসূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই সিন্ডিকেটের আহ্বানে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ জানান, অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরীর ‘ঈশ্বরের স্বরূপ প্রসঙ্গে ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি : একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ দর্শন বিভাগের কপুলা (Copula) জার্নাল এ ২০১১ সালে XXVIII ভলিউমে ১৪৭-১৭১ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়। প্রবন্ধের তিনি অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলামের ‘পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস: থেলিস থেকে হিউম’ গ্রন্থ থেকে ব্যাপক হারে চুরি করেছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, অধ্যাপক তারেক যথাক্রমে ৩৩, ৩৪, ৬৩, ৬৪, ১০৪, ১০৫, ১৩০, ১৩১, ১৪২, ১৪৩, ২৫১, ২৬৯, ২৯৬, ৪৩৮, ৪৫০, ৪৫১, পৃষ্ঠা থেকে প্রায় ৭০০০ শব্দের প্রবন্ধে ১৩৪৩ শব্দ চুরি করেছেন যা তার মূল প্রবন্ধের প্রায় ১৯ শতাংশ। যেখানে একটি গ্রন্থ থেকে ২ শতাংশ মাত্র নেওয়া যায়।

যেকোনো গবেষণায় একজন গবেষক একটি উৎস থেকে ২ শতাংশ তথ্য নিতে পারেন এবং সেগুলো যথাযথভাবে লেখকের নাম, প্রকাশকাল, গ্রন্থ বা প্রবন্ধের শিরোনাম, পৃষ্ঠা প্রকাশক ও প্রকাশনার স্থান উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলামের নাম প্রবন্ধের কোথাও উল্লেখ করেননি।

এছাড়াও ওই প্রবন্ধে অধ্যাপক অর্জুন বিকাশ চৌধুরী রচিত মডার্ন বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ২০০৩-২০০৪ সালে প্রকাশিত ভারতীয় দর্শন গ্রন্থের ১১৬-১১৭ পৃষ্ঠা থেকে ৭২ শব্দ চুরি করেছেন।

প্রমোদবন্ধু সেনগুপ্ত রচিত ব্যানার্জি পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘পাশ্চাত্য দর্শনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আধুনিক যুগ’ গ্রন্থের ৯৮-১০২ পৃষ্ঠা থেকে নিয়েছেন ৩৭৯ শব্দ। সব মিলিয়ে ২ হাজার ২ শব্দ তিনি অন্য প্রবন্ধ থেকে কপি করে করেছেন। যা শতকরা হিসাবে ২৯ শতাংশ। এছাড়া তিন ১৮৫ শব্দ করেছেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী হিন্দু ধর্মে বর্ণিত ঈশ্বরের গুণাবলী সম্পর্কে লিখছেন ১৫৪ পৃষ্ঠায়। এই সব তথ্য তিনি নিয়েছেন রাধাগোবিন্দ নাথ থেকে যা E.C. Dimock রচিত The Place of the Hidden Moon গ্রন্থের ফুট নোটের ১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

পুরো প্রবন্ধে অধ্যাপক জনাব মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী আরও যেসব বিষয় লিখেছেন তার উৎস নির্দেশে ব্যর্থ হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে অধ্যাপক জনাব মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী সেগুলোও চুরি করে থাকতে পারেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী বিভাগের গবেষণা সেমিনারে এমফিল পিএইচডি গবেষকদের ‘চোর’ বলে রায় দেন। অথচ তিনি নিজেই এমন একটি কাজ করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত গবেষণা চুরি রোধ নীতিমালা অনুসারে ২০ শতাংশের উপরে অন্য কোনো উৎস থেকে কপি করা হলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়া অধ্যাপক জনাব মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী ২০২১ সালে এক সভায় দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ উল্লাহকে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ বলে ব্যঙ্গ করেন। এ সময় মুহাম্মদ তারেক চৌধুরীকে অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ সতর্ক করে বলেন যে, মিটিং রেকর্ড হচ্ছে। তখন তিনি দম্ভের সঙ্গে বলেন, সেটা তিনি জানেন।

ওই মিটিং এর ধারণকৃত অডিও-ভিডিও বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মানসুরের নিকট সংরক্ষিত আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ।

এছাড়াও বিভিন্ন সভায় মোহাম্মদ উল্লাহকে আক্রমণ করে কথা বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী। সবশেষে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর দর্শন বিভাগের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিটি অফ কোর্সেস এর সভায় মোহাম্মদ উল্লাহকে নির্দেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রিত বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক কাওসার মুস্তাফাকে বলেন, আপনারা এই সব বেয়াদপ পয়দা করেছেন।

এছাড়াও গত বছরের ২০ মার্চ দর্শন বিভাগের সেমিনার কক্ষে অধ্যাপক ফরিদ আহমেদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন তিনি।

অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরীর এমন আচরণ বিভাগের পরিবেশ নষ্ট করছে বিধায় একান্ত নিরুপায় হয়ে নিরাপত্তাহীনতা থেকে তিনি এই অভিযোগ দাখিল করেছি।’

অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ জানান, তার অভিযোগ আমলে নিয়ে গেল বছরের ১৮ এপ্রিল তারিখে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে বলা হলে তিনি গতবছরের জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ জমা দেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা বেরোবি প্রশাসনের

কোটা আন্দোলনে হতাহত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার নির্দেশ জবি উপাচার্যের

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেন জাবি শিক্ষক জাহিদুল

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এইচএসসির আরও ৪ পরীক্ষা স্থগিত

এইচএসসির স্থগিত হওয়া পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর

সুনসান নীরবতায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ চবি শিক্ষকদের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রলীগ মুক্ত ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :