সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন মানসম্মত তথ্য ও সমন্বিত উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৫

রোড ক্র্যাশ বা সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে দেশের কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী। বিশেষ করে শিশু এবং যুবকদের। যার মাশুল হিসেবে টানতে হচ্ছে বিশাল স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বোঝা।

সড়ক দুর্ঘটনায় বিভিন্ন তথ্যের মানহীনতা ও উপযুক্ত সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মানসম্মত তথ্য ও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। এমনটা সম্ভব হলে জনগণের জন্য সড়ককে নিরাপদ রাখার কাজ সঠিকভাবে আলোর মুখ দেখবে।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ— সিআইপিআরবির উদ্যোগে বাংলাদেশের রোড ক্র্যাশ তথ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এই কর্মশালার আয়োজন করে সিআইপিআরবি।

সিআইপিআরবি বলছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য ও কর্ম-পরিকল্পনা মধ্যে ফলপ্রসূ সমন্বয় জরুরি। এ লক্ষ্যেই ‘বাংলাদেশের রোড ক্র্যাশ তথ্য ব্যবস্থাপনা-শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এআরআই) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অ্যধাপক ড. মো. মাহজারুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ।

সড়কে নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করে এমন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কনট্রোল ইউনিট, বাংলাদেশ পুলিশ, জাইকা, ভাইটাল স্ট্র্র্যাটেজি এবং জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এর ইন্টার ন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের রোড ক্র্যাশ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যধাপক ড. মো. মাহজারুল হক বলেন, ‘রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। এই কাজগুলো থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপযুক্ত সমন্বয়ের মাধ্যমে রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধ আন্দোলনকে আরও জোরদার করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। সড়ককে জনগণের জন্য নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

স্বাগত বক্তব্যে সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম ফজলুর রহমান বলেন, ‘রোড ক্র্যাশ বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা গেছে তথ্য ব্যবস্থাপনায় যুতসই সমন্বয়ের অভাব। কর্মশালার মাধ্যমে তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত ও কার্যকর ডাটা সিস্টেম তৈরীর উপায় নির্ধারিত হবে। রোড ক্র্যাশ বিষয়ক তথ্য শুধু একটি ডাটাই নয়, এর সঙ্গে একটি পরিবারের স্বপ্ন, একটি জাতির ভবিষ্যৎ জড়িত। তাই আন্তরিকতা ও মানবিকতার সাথে এই সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।’

বিশ স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩’ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। যা প্রতি মিনিটে ২ জন ও প্রতিদিন ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি।

বিশ স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ৫-২৯ বছর বয়সী শিশু এবং যুবকদের মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং সকল বয়সী মানুষের মৃত্যুর ১২তম কারণ।

সড়কে সারা বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার প্রায় সবই (৯২ শতাংশ) হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যু এবং ইনজুরির অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ২০১৬ সালে প্রতি ১০ হাজার জনে মারা যেত ১৫.৩ জন, ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।

সিআইপিআরবি বলছে, হতাহতের যে তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত হয় তার সংখ্যার যেমন তারতম্য রয়েছে তেমনি পার্থক্য রয়েছে এর গুনগত মান নিয়েও।

তারা বলছে, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অ-পরিক্ষীত ও বহুমূখী সুচকের ব্যবহার, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির ভিন্নতা, পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় ভিন্ন ভিন্ন ডাটাবেজ তৈরি, যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণের অপ্রতুলতা ইত্যাদি এর উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত। যে কারণে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে সড়ক নিরাপত্তাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং কার্যকর কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

সে কারণে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য ব্যবস্থাপনায় অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরনের উপায় খোঁজার উদ্দেশ্যে জাতীয় পর্যায়ের এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছের সংশ্লিষ্টরা।

কর্মশালায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে ডিএমপি বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। তাই মানসম্মত ও সঠিক তথ্য দিয়ে জাতীয় ডেটাবেজ তৈরি করতে ডিএমপি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে ডিএমপির দক্ষতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।’

ডিআরআর এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘জরুরি অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত ইনজুরির ধরণ ও ব্যাপ্তি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। উপযুক্ত রেফারেল সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি জীবন বীমাকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।’

ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন এর সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশালিস্ট ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ ন্যাশনাল রোড সেফটি কাউন্সিলের এর সক্ষমতা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করেন।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘রোড সেফটি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ইনজুরির মাত্রা কমিয়ে সড়কে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবদান রাখবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এএম/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন, কোন খাতে কত বরাদ্দ

লালবাগে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অটোরিকশা চালকের মৃত্যু

ট্রাফিক পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় ঢাকা আরও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে: ডিসি মোস্তাক 

দুবাইয়ে ৩৯৪ বাংলাদেশি গোপনে সম্পদ গড়েছেন, শীর্ষে ভারত 

তিন দিনের সফর শেষে ঢাকা ছাড়লেন ডোনাল্ড লু

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ২১ হাজার বাংলাদেশি

ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে দুই দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি

উপজেলা নির্বাচন: ১৫৭ উপজেলায় তিন দিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

সরকারের জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি হ্রাস করেছে: প্রধানমন্ত্রী

মাদকের নতুন ডিজি মোস্তাফিজুর রহমান 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :