অস্ত্রোপচার সফল, শঙ্কামুক্ত স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী
আততায়ীর গুলিতে আহত স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর জীবন এখন শঙ্কামুক্ত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী টমাস তারাবা।
তারাবা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি বেঁচে যাবেন বলেই ধারণা করছি। তবে তার বিপদ এখনো কাটেনি।’
স্থানীয় ব্রডকাস্টার টিএ৩ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি ছোড়া হয়েছিল, তার মধ্যে একটি ফিকোর পেটে লেগেছে।
এর আগে তিন ঘন্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট কালিনাক বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। সেসময় চিকিৎসকরাও জানিয়েছিলেন ফিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বুধবার আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন রবার্ট ফিকো। ঘটনার পর তাকে উদ্ধার করে বানস্কা বাইস্ত্রিকা শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার সরকারি একটি বৈঠকে যোগ দিতে ৫৯ বছর বয়সী ফিকো বুধবার স্লোভাকিয়ার হ্যান্ডলোভা শহরে গিয়েছিলেন। শহরটি স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। সেখান ফিকোকে দেখার জন্য তার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী একত্রিত হয়েছিল।
বৈঠক শেষে তিনি যখন জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন, তখনই ফিকোকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।
হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাইরে বেশ কিছু মানুষ হামলাকারীকে ধরতে ছুটে যাচ্ছে। ঘটনার পরপরই নিরাপত্তাকর্মীরা ফিকোকে ঘিরে ধরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন। কিন্তু ততক্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এরপর প্রধানমন্ত্রী ফিকোকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হওয়ায় তাকে বানস্কা বাইস্ত্রিকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে তাকে হেলিকপ্টারে করে বানস্কা বাইস্ত্রিকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা বিবেচনা করে তাকে রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় না নিয়ে বানস্কা বাইস্ত্রিকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে ব্রাতিস্লাভার দূরত্ব অনেক বেশি।’
এদিকে, হামলার পর ঘটনাস্থল থেকেই আততায়ী সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে কারা এবং ঠিক কী কারণে ফিকোর উপর হামলা চালানো হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জুজানা কাপুতোবা। এই হামলাকে ‘জঘন্য ও বর্বর’ আখ্যা দিয়ে ফিকোর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করে বলেছেন যে, স্লোভাকিয়ায় মাটিতে এমন সহিংসতার কোনও স্থান নেই।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নেতা হিসেবে রবার্ট ফিকো স্লোভাকিয়ায় বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর দেশটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তার 'বামপন্থী' দল জয়লাভ করে। এর মাধ্যমে তৃতীয় মেয়াদে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন ফিকো। দেশটিতে তিনি রুশপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত।
গত বছরের নির্বাচনের সময় তার দল যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছিল বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত কয়েক মাসে নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিকভাবে বেশ বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন ফিকো। তারপরও গত জানুয়ারিতে তিনি ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন যে, ফিকোর শাসনামলে স্লোভাকিয়ায় পশ্চিমাপন্থী নীতির পরিবর্তন হয়েছে। এমনকী, তার সরকারের নীতির বিরোধিতা করে দেশটিতে অতীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ হতেও দেখা গেছে।
সূত্র: বিবিসি
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এমআর)