কে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস, ট্রাম্পের সঙ্গে কী সম্পর্ক?

পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুস দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগে করা মামলায় বিচার চলছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যার ফৌজদারি অপরাধের কারণে বিচার হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি অর্থ দেওয়ার বিষয় নিয়ে মিথ্যা বলছে।
ড্যানিয়েলস দাবি করেন, তার ও ট্রাম্পের মাঝে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবীর মাধ্যমে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুস দেওয়া হয়েছিল তাকে, যা তিনি গ্রহণও করেছিলেন।
ট্রাম্পের সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে পরে একাধিক অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়।
এই অভিযোগটি প্রথম প্রকাশ হয় ২০১৮ সালে এবং শুরু থেকেই সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিজ ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি বারবার অস্বীকার করে আসছেন।
স্টর্মি ড্যানিয়েলস কে?
৪৫ বছর বয়সি মিজ ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানাতে। তিনি পেশায় একজন পর্ন তারকা ও পরিচালক। তিনি তার কাজের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও জিতেছেন।
এছাড়াও তিনি মূলধারার হলিউড চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কমেডি সিনেমা ‘দ্য ফর্টি-ইয়ার ওল্ড ভার্জিন এ্যান্ড নকড আপ’।
তিনি রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তিনি নিজেকে রিপাবলিকান হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। রিপাবলিকান পার্টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও একজন রিপাবলিকান। তিনি ২০১৬ সালের এই দল থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।
ড্যানিয়েলসের ‘যৌন সম্পর্কের’ দাবি
ড্যানিয়েলস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে একটি দাতব্য গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সেখানেই তাকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। তিনি প্রথমে ট্রাম্পের সাথে ডিনারে যোগ দিতে চাননি। কিন্তু ট্রাম্পের এক সহযোগী তাকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছিল।
এরপর ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার লেক টাহোতে অবস্থিত ট্রাম্পের হোটেল স্যুটে ডিনার শেষে যৌন সম্পর্কে জড়ান তারা।
মুখ বন্ধ রাখতে ‘হুমকি ও ঘুস’
ড্যানিয়েলস বলেন, এই সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন ২০১৬ সালের নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুস দিয়েছিলেন। সেবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, তিনি সেই ঘুস নিয়েছিলেন কারণ তিনি তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বলেন, চুপ থাকার জন্য তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় ও শারীরিকভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
২০১৮ সালে ড্যানিয়েলস এক সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, তখন থেকে ঠিক সাত বছর আগে লাস ভেগাসের একটি পার্কিং লটে কীভাবে একজন অপরিচিত লোক এসে তাকে ও তার শিশু কন্যাকে ভয় দেখিয়েছিল এবং ‘ট্রাম্পকে ছেড়ে চলে যান’ বলেছিল।
ড্যানিয়েলসের দাবি, ২০১১ সালে টাচ ম্যাগাজিনকে ওই সম্পর্কের বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
সিবিএস-এর ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে ওই অপরিচিত ব্যক্তির হুমকির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘খুব সুন্দর ছোট্ট একটি মেয়ে আমার। যদি তার মায়ের কিছু হয়ে যায়, তবে সেটি বেশ লজ্জার হতে পারে।’
সিবিএস-এর ওই পর্বটি সম্প্রচারের আগে কোহেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি শেল কোম্পানি মিজ ড্যানিয়েলসকে ২০ মিলিয়ন ডলারের মামলার হুমকি দেয়। ড্যানিয়েলসকে ওই কোম্পানি জানায়, তিনি তাদের তথ্য গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।
ড্যানিয়েলস সিবিএস-এর অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি ওই চুক্তি ভেঙ্গে জাতীয় টেলিভিশনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় ১০ লাখ ডলার জরিমানার ঝুঁকিতে ছিলেন, কিন্তু “নিজেকে রক্ষা করার মতো সামর্থ্য অর্জন করাটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বিষয়ক স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার তখন ছাপতে পারেনি ইন টাচ ম্যাগাজিন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তারা সেটি প্রকাশ করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কী বলছেন?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ম্যানহাটনের ফৌজদারি আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ ৩৪ ধরনের অপরাধের অভিযোগ আনা হলে তিনি সবকটিই অস্বীকার করেছেন।
ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের ব্যাপারে তার সংশ্লিষ্টতা আছে বলে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেইসাথে, একজন সাবেক প্লেবয় মডেলের সাথে তার (ট্রাম্প) কথিত যৌন মিলনের বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য সেই মডেলকেও অর্থ প্রদানের বিষয়টিও এখন তদন্তাধীন।
এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি আবারও এই মামলার বিচারকার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি ডেমোক্র্যাট পরিচালিত একটি ‘উইচ হান্ট”।’
সূত্র: বিবিসি
(ঢাকাটাইমস/০৮মে/এমআর)

মন্তব্য করুন