মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে জবি ছাত্রলীগ, নানা পেশায় জড়িত অধিকাংশ নেতা

​​​​​​​জবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৪, ২১:০২

ইব্রাহিম ফরাজিকে সভাপতি আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালের জানুয়ারি। সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন অষ্টম ব্যাচের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম ব্যাচ এসেছে। ইব্রাহিম-আকতারের কমিটিতে স্থান পান ৩৫ জন। বর্তমানে ওই ৩৫ জনের অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয়। তারা নানা পেশার সঙ্গে জড়িত।

তাদের সময়ে গত দুই বছরে দফায় দফায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এদিকে কমিটি ভেঙে যাবার আশঙ্কায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে না বলে মনে করছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে এখন তারা কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার আগে নিজেরাই মেয়াদোত্তীর্ণ বনে গেলেন।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি গঠনের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন। ২০২২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গঠনের দুই বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এতে একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে বেড়েছে হতাশা।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০() ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর সেই হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি শেষ হয়েছে ইব্রাহিম-আকতারের নেতৃত্বে বর্তমান কমিটির মেয়াদ।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিভি সংগ্রহ করা হলেও এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের দাবির মুখে বিভিন্ন সময়ে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আশার বাণী শুনালেও তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ পদবঞ্চিত কর্মীদের।এদিকে দলীয় অন্তর্কোন্দল অনিশ্চয়তায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অনেকে। এছাড়াও জাতীয় কর্মসূচী ব্যতীত পদপ্রত্যাশীদের দেখা মিলছে না ক্যাম্পাসে। ফলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝেও। ফলে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার কিছুটা দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।

পদপ্রত্যাশী একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা সময়ে বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন। বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্য গত বছরগুলোতে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলেননি। যখনই জুনিয়ররা কমিটি নিয়ে কথা বলতে গেছেন তখন তারা সিভি আহ্বান করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার মুলা ঝুলিয়ে আমাদের থামিয়ে দিয়েছেন। মূলত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়টি বলে আমাদের দমিয়ে রাখা হয়। এখন তো তারা নিজেরাই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছেন।

তাদের কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, তারা আমাদের ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র। বর্তমান যারা মোস্ট জুনিয়র তাদের থেকে তারা ১০ থেকে ১৩ বছরের বড়। এতে বলা যায় তাদের সাথে বর্তমান কমিটির নেতাদের জেনারেশন গ্যাপ থাকায় জুনিয়ররা এখন ছাত্রলীগ করতে চান না।

এবিষয়ে পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘ইউনিট প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির আদৌ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সদিচ্ছা আছে বলে আমার মনে হয় না। তারা আংশিক কমিটির ভার সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন৷ আমরা কোনো প্রোগ্রামে গেলে জুনিয়র দিয়ে আমাদের অপমানিত করা হয়। তারা নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করছে। ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গেলে বয়সসীমার একটি বিষয় আছে। আমাদের সেটাও পার হয়ে যাচ্ছে। দ্রুতই কমিটির পূর্ণাঙ্গ হওয়া প্রয়োজন

জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাবুল হোসেন পরাগ বলেন, কমিটি এতদিনেও পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার পেছনে ইউনিট প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির অবশ্যই দায় রয়েছে। ক্ষমতা পেলে সবাই চেয়ারে থাকতে চায়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দিলে নতুন করে ক্যান্ডিডেট তৈরি হবে, তাদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে। এমনিতেই তারা ৩৫ সদস্যের কমিটির সদস্যদের ক্যাম্পাসে চলতে দেয় না। তারা নিজেদের মতো কর্মকাণ্ড চালায়৷ এমনকি আমাকে শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দিয়েছিলো তারা। কমিটির পূর্ণাঙ্গ করার যে দীর্ঘসূত্রিতা, এটা তাদের একটা রাজনৈতিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের আশেপাশে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সমিতি হাসপাতাল থেকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি করার বিষয়টি সামনে এসেছে। সর্বশেষ সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের নাতির গাড়িতে হামলার দায়ে বর্তমান কমিটি মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়ির ড্রাইভার মো. নজরুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগে কৌশিক সরকার সাম্য নামে জবি শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীর নামে মামলা হয়। এই ঘটনায় মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার সংশ্লিষ্টতা পায় বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস. এম আকতার হোসাইন বলেন, আমি ঢাকাতে নেই, গ্রামে এসেছি৷ ঢাকাতে গিয়ে যে যে তথ্য লাগবে সব দেবো।

বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, আমরা খুব শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে দেবো৷ আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে। কমিটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়৷ এখানে কে কী বলছে সেটা দেখার বিষয় না৷

একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জবি ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে। খুব দ্রুতই জবি ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে তৃতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হবে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেন দ্রুতই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে সেজন্য আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। তবে জবি ইউনিট থেকে আমাদের কাছে এখনও কমিটির কোনো খসড়া পাঠানো হয়নি। নতুন কমিটি কবে নাগাদ হতে পারে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না৷ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দিলে অনেক ব্যাচ বাদ পড়ে যাবে৷

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রয়ারি জবি ছাত্রলীগের দুগ্রপের সংঘর্ষের পরে তরিকুল-রাসেল কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ২০ জুলাই কমিটি গঠনের জন্য জবি ছাত্রলীগের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আড়াই বছর পরে ইব্রাহিম ফরাজি আক্তারকে দিয়ে নতুন কমিটি পায় জবি ছাত্রলীগ।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/কেএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :