মোদির কাছে যা চান নীতীশ-নাইডু

সরকার গঠনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমর্থনই ভরসা বিজেপির। আর সেই সুযোগে মোদির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা, অভিন্ন কর্মসূচি চান চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার।
অন্ধ্রপ্রদেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে এবার কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ‘কিং মেকার’ বলা হচ্ছে। কারণ, দশ বছর পর প্রকৃত অর্থে যে এনডিএ সরকার গঠিত হচ্ছে, সেখানে এই দুই নেতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। তাদের কাছে আছে মোট ২৮ জন সাংসদ। ফলে এনডিএ তাদের উপর নির্ভরশীল থাকবে। কিন্তু তাদের সমর্থন শর্তহীন নয়। তাদের দাবির তালিকাটা দীর্ঘ। তারা প্রথম থেকেই সেই দাবিপূরণ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন।
যেখানে চন্দ্রবাবু ও নীতীশের দাবি মিলে যাচ্ছে
চন্দ্রবাবু ও নীতীশ কুমার দুজনেই তাদের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের জন্য বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেই এই মর্যাদা দিতে পারে। এখনো পর্যন্ত ভারতে ১১টি রাজ্যকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া আছে। শেষ য়ে রাজ্যকে এই মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তা হলো তেলেঙ্গানা।
তবে চতুর্দশ অর্থ কমিশন বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বন্ধ করার প্রস্তাব দেয়। তারা বলে তার জায়গায় ওইসব রাজ্যের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ দশ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হোক।
নীতীশ ২০০৬ থেকে ও চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের পর থেকে এই বিশেষ মর্যাদা দাবি করে আসছেন। বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা পেলে য়ে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার দেয়। এছাড়া আর্থিক ও পরিকাঠামোগত নানান সুবিধা রাজ্য পায়।
বিহারে ৫২ শতাংশ মানুষ গরিব। দেশের সবচেয়ে গরিব রাজ্যগুলির মধ্যে বিহার একটি। তাই নীতীশ বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা চান। আর অন্ধ্র ভাগ হওয়ার পর শিল্পপ্রধান এলাকা চলে গেছে তেলেঙ্গানায়। অন্ধ্রের উপর আর্থিক দায় প্রচুর বেড়েছে, কিন্তু রাজস্ব কমেছে। তাই তারাও বিশেয মর্যাদা চায়। দুই রাজ্যকে এই মর্যাদা দিতে গেলে বছরে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার বাড়তি দায় এসে পড়বে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে। কিন্তু এবার চন্দ্রবাবু ও নীতীশ কুমার দুজনেই প্রথম থেকেই বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
কোন কোন মন্ত্রণালয় চাইছেন তারা?
মন্ত্রণালয় দাবির ক্ষেত্রে নীতীশকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন চন্দ্রবাবু। তিনি পাঁচটি মন্ত্রণালয় চান। তার মধ্যে আছে গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদ, স্বাস্থ্য, সড়ক পরিবহন, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ।
নীতীশের চাহিদার মধ্যে আছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, কৃষি মন্ত্রণালয়।
এছাড়া নীতীশ চান, এনডিএকে একটা ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি নিতে হবে। তার ভিত্তিতেই সরকার চলবে। এর বাইরে থাকা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এনডিএ-র বৈঠকে তা অনুমোদন করাতে হবে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএতে একটা অভিন্ন সাধারণ কর্মসূচি ছিল।
নীতীশের দলের মুখপাত্র ও প্রবীণ নেতা কে সি ত্যাগী বলেছেন, ‘অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে। আমরা চাই এই প্রকল্পের পর্যালোচনা হোক।’ অগ্নিবীর হলো চার বছরের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে সেনায় কাজ করার প্রকল্প।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানে নবনির্বাচিত সব সাংসদ, দলের মুখ্যমন্ত্রী, উপ মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় পদাধিকারীরা থাকবেন। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হবেন মোদি। তারপর তিনি সরকার গঠনের আবেদন জানাবেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/এমআর)

মন্তব্য করুন