চিকিৎসক সংকটে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দুর্ভোগে ৫ লাখ মানুষ

চিকিৎসক সংকটে রায়পুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। এতে হতদরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের সাধারণরোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে আছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজন যোগদানের পরই ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ায় চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ৮ জন। এ অবস্থায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা।
সূত্র মতে, গত তিন মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নিয়ে ৬ জন চিকিৎসক সদর হাসপাতালে চলে গেছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আবদুল মান্নান বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারি নাক-কান-গলার কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
আমেনা বেগম নামে এ নারী রোগী জানান, জরায়ু সমস্যার জন্য চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন তিনি। কিন্তু এসে শুনেন এ বিভাগের কোনো ডাক্তার হাসপাতালে নেই।
শুধু মান্নান আর আমেনা নয়, রায়পুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বহির্বিভাগে আসা রোগীদের। এছাড়া অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রসূতিদের চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, হাসপাতালে গাইনি, অর্থোপেডিক সার্জন, অ্যানেসথেসিয়া, চক্ষু ও ইএনটি, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগীকে যেতে হচ্ছে জেলা সদরে। যাদের সামর্থ আছে তারা যাচ্ছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।
চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ২৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৭ পদসহ ৫১টি পদের মধ্যে ৪১টি পদই শূন্য রয়েছে। সেবিকার ৩০টি পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে ১৪টি। ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তার সবকটি পদও শূন্য দীর্ঘদিন ধরে। এ কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার চিকিৎসা সেবা কার্যাক্রম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (আরএমও) ডা. মামুনুর রশিদ পলাশ বলেন, ‘আরএমওকে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বেশি। তার পরেও আমি রোগী দেখি। তবে চিকিৎসক সংকটে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের প্রাণ হলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এখানে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগদান করলেও তারা ছুটি নিয়ে চলে গেছেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘চিকিৎসকসহ জনবল না থাকায় সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অবস্থা এমন যে শুধু হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। সমস্যাগুলো বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো ছয়জন চিকিৎসক এমপি মহোদয়ের ডিও লেটার নিয়ে সদর হাসপাতালে চেলে গেছে।
(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/পিএস)

মন্তব্য করুন