হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির পদত্যাগ চান শিক্ষার্থীরা

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও মহিবুল হাসান নওফেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হকৃবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক মো. আবদুল বাসেতের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত এই বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে আবদুল বাসেতের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও হকৃবির ভিসি নির্বিকার। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্র-জনতা আন্দোলনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিসির পদত্যাগের দাবি করেছেন।
সুজন চৌধুরী নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। বিগত সরকারের নেতাদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগ করতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই দুর্নীতির অভয়ারণ্য, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভিসি আবদুল বাসেত। দুর্নীতিবাজ ভিসির অধীনে কখনো শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে না। অবিলম্বে ভিসির পদত্যাগ করা উচিত। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমে তার পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে।’
ভিসি নির্লজ্জের মতো পদ আঁকড়ে আছেন মন্তব্য করে রুবেল আহমেদ নামের একজন বলেন, ‘হবিগঞ্জের সব শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল তাকে পদত্যাগের কথা বললেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। তিনি বিগত সরকারের দুর্নীতি ঢাকতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন আবদুল বাসেতের প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে না যেতে ভয়-ভীতি দেখিয়েছিলেন তিনি। আমরা চাই ভিসি পদ থেকে তিনি এখনই পদত্যাগ করুন।’ অন্যথায় তার কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
তার পদত্যাগের দাবির বিষয়ে জানতে ভিসি আবদুল বাসেতের সাথে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভিসি বাসেতকে খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রয়োজনে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা।
গত জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে ৮০ জনের নিয়োগ নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। নিয়োগ পরীক্ষা হবিগঞ্জে না হয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। কোনো প্রবেশপত্র না দিয়ে পরীক্ষার এক দিন আগে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতে পরীক্ষায় প্রবেশের আগ মুহূর্তে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়। ২৯ জানুয়ারি ঢাকায় এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৯ মার্চ দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার ফার্মগেটের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সিন্ডিকেট সভায় এসব পদে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করেন উপাচার্য প্রফেসর মো. আবদুল বাসেত। পরদিনই নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদানও সম্পন্ন করেন ওই বিতর্কিত ভিসি।
ওই নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে ৩৩ জন, সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী পদে ৬, সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) পদে ১, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ৩, সেকশন অফিসার পদে ৯, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে ৯, ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে ১, ইলেকট্রিশিয়ান পদে ১, ক্যাটালগার পদে ২, ফটোকপি অপারেটর পদে ৩, উপসহকারী খামার তত্ত্বাবধায়ক পদে ১, বাবুর্চি পদে ২, অ্যাটেনডেন্ট পদে ২, ফটোগ্রাফার পদে ১, অফিস সহায়ক পদে ১৪, নিরাপত্তা সুপারভাইজার পদে ১, সুপারিনটেনডেন্ট পদে ১ জনসহ মোট ৮০ জনকে নিয়োগ দেন ভিসি আবদুল বাসেত।
এসব পদে শত-শত চাকরিপ্রত্যাশী আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু তাদের অনেককে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়নি। জামাল আহমেদ হিমু নামের একজন চাকরিপ্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুবার টাকা দিয়ে আবেদন করলাম। কিন্তু একবারও পরীক্ষার সুযোগ দিল না। কিন্তু তাদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ। আমার মতো শত-শত আবেদনকারী পরীক্ষার সুযোগ পাননি।’
২০১৯ সালে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০২০ সালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভাদৈ নামক স্থানে ভাড়া করা স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচটি অনুষদ নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় এই কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের।
(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন