গাজায় নিহত ২ শতাধিক সাংবাদিক, জাতিসংঘের সতর্কতা

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের গাজা উপত্যকায় মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতা বেড়েই চলেছে। এসব এলাকায় যারা বসবাস করছে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। কোনো কিছুকেই ইসরাইয়েলি বাহিনী তোয়াক্কা করছে না। এমনকি সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা সবাইকে মর্মাহত করেছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর।
বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২ মে (শুক্রবার) জাতিসংঘের এই সতর্কতা সামনে আসে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় শতাধিক সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী সাংবাদিকও রয়েছেন। এই ভয়াবহ চিত্র গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের জন্য একটি অশনি সংকেত—এমনটাই বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ওএইচসিএইচআর-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২১১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮ জন নারী। ইউনেসকোর তথ্য অনুসারে, এদের মধ্যে অন্তত ৪৭ জন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে নিহত হয়েছেন, অর্থাৎ তারা তখন স্পষ্টভাবে প্রেস ভেস্ট ও পরিচয়পত্র পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাতে এখনও ৪৯ জন সাংবাদিক আটক রয়েছেন। জাতিসংঘের ভাষ্য মতে, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন—এসবই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী গুরুতর লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে আটক সাংবাদিকরা জাতিসংঘকে জানিয়েছেন, তাদের পেশাগত কাজ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধর, অপমান এবং যৌন সহিংসতার মতো ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে। এ ছাড়া একজন সাংবাদিক বলেন, "প্রেস ভেস্ট এখন আর রক্ষা করে না বরং আমাদের টার্গেট বানিয়ে ফেলে।" তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, এসব নির্যাতন মূলত ফিলিস্তিনি মিডিয়ার ওপর লাগাতার দমন-পীড়নের অংশ, যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এসব হামলা কেবল ব্যক্তি সাংবাদিক নয়, বরং পুরো গণমাধ্যম ব্যবস্থার ওপর আঘাত।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে— এমন ‘শক্ত প্রমাণ’ রয়েছে। যদি তা সত্য প্রমাণিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এগুলো যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা ক্যান জানায়, নতুন মানবিক অঞ্চল তৈরির পাশাপাশি সেখানে অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। দক্ষিণ গাজার মোরাগ করিডোর থেকে রাফাহ পর্যন্ত অঞ্চলে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা যাচাই শেষে স্থানান্তর করা হবে এবং মার্কিন এনজিওগুলো তাদের খাদ্য ও ত্রাণ বিতরণ করবে ইসরায়েলি সেনা তত্ত্বাবধানে। সামরিক ক্লান্তি সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির।
গাজার সাংবাদিকদের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে গভীরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত ও জবাবদিহির পথ সুগম করে সাংবাদিকদের জীবন ও পেশাগত নিরাপত্তা রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩ মে/আরজেড)

মন্তব্য করুন