গাজা দখলে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১০| আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৫
অ- অ+

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দখলদার ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একইদিনে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। এরই মধ্যে গাজা সিটি দখলে হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি সেনবাহিনী। গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র, যেখানে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ ভয়াবহ অবস্থায় আটকা পড়ে আছেন। খবর আলজাজিরা’র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলা ও অনাহারে অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

একইসঙ্গে ইসরাইলি সেনারা জানিয়েছে, তারা গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র গাজা সিটি দখলের লক্ষ্যে অভিযানের প্রথম ধাপ শুরু করেছে। সেখানে এখনো প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আটকে আছেন।

এদিকে শুধু বুধবারই ক্ষুধায় মারা গেছেন আরও তিন ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে অনাহারের কারণে উপত্যকাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৯ জনে, যাদের মধ্যে ১১২ জন শিশু।

ইসরায়েলি হামলার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবুতে বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের জাতীয় বাস্কেটবল দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় মোহাম্মদ শালান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন, যিনি খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে গুলিতে সর্বশেষ শিকার। ইসরায়েলি বাহিনী তাকে দক্ষিণ গাজায় গুলি করে হত্যা করে। বুধবার অন্তত ৩০ জন খাদ্য সহায়তা প্রার্থী গুলিতে নিহত হন।

গাজা দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভিক্ষে ভুগছে। ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ ও চলমান হামলার কারণে খাদ্য, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, গাজায় অপুষ্টি বাড়ছে। তারা বলেছে, “এটি শুধু ক্ষুধা নয়, এটি অনাহার।”

সংস্থাটি আরও জানায়, “অপুষ্টি এক নীরব ঘাতক, যা আজীবন বিকাশগত ক্ষতি ঘটায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে তোলে, ফলে সাধারণ অসুস্থতাও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।”

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজা শহরে প্রায় তিনজন শিশুর মধ্যে একজন বর্তমানে অপুষ্টিতে ভুগছে।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা গিশা ইসরায়েলের সরকারপন্থী নানা বক্তব্য খণ্ডন করে বলেছে, ইসরায়েল শুরু থেকেই গাজায় ত্রাণ প্রবেশকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

তাদের দাবি, “ইসরায়েল এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং করছে, যাতে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।”

অন্যদিকে, ইউএনআরডব্লিউএ আবারও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, তাদের কর্মীরা গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাজ করছেন।

ডা. হিন্দ, গাজার একজন ইউএনআরডব্লিউএ চিকিৎসক বলেন, “আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাজ করছি।”

অন্য এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “আমাদের প্রায়ই প্রচণ্ড রোদে দীর্ঘপথ হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়, এরপর সেখান থেকে আমাদের জনগণকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়।”

গাজার সিভিল ডিফেন্স জ্বালানি সংকট নিয়ে সতর্ক করেছে। তারা জানিয়েছে, জ্বালানি না থাকায় জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে।

এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের অনেক যানবাহন মিশনে যাওয়ার পথে থেমে গেছে—কিছু জ্বালানি সংকটে, কিছু যন্ত্রাংশের অভাবে। আমরা ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছি, এর মধ্যেই ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের হুমকি বহাল রয়েছে।”

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা আগামী কয়েক সপ্তাহে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডেকে নেবে। গাজা শহর দখলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ইতিমধ্যে প্রথম ধাপ শুরু করেছে।

হামাস বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা শহরে প্রবেশ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর “নৃশংস যুদ্ধ” চালিয়ে যেতে চায় এবং শহর ধ্বংস করে জনগণকে উচ্ছেদ করতে চায়।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬২ হাজার ১২২ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২১ আগস্ট/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও
অবৈধ পথে লিবিয়ায় যাওয়া ১৭৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন
ভারতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অফিস বন্ধ নিয়ে যা জানাল দিল্লি
হবিগঞ্জে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে ভয়াবহ আগুন, ১০ গাড়ি ভস্মীভূত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা