মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও

যুক্তরাষ্ট্রে বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় সাবেক বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ‘পৃথিবীর সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ হিসেবে খ্যাত এই বিচারকের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত বুধবার (২০ আগস্ট) তার অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ ও সাহসী লড়াইয়ের পর ৮৮ বছর বয়সে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন। তিনি তার দয়া, নম্রতা ও মানুষের কল্যাণের প্রতি অটল বিশ্বাসের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন।’
আরও বলা হয়, বিচারক ক্যাপ্রিও আদালত কক্ষ এবং তার বাইরেও তার কাজের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেছিলেন। তার ব্যক্তিত্ব, রসবোধ ও দয়া তাকে যারা চিনতেন তাদের সকলের ওপর এক অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছে।’
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে আরও বলা হয়, ‘তিনি কেবল একজন সম্মানিত বিচারক হিসেবেই নয়, বরং একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বামী, বাবা, দাদা, প্রপিতামহ এবং বন্ধু হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার কাজ তার উত্তরাধিকার হিসেবে বেঁচে আছে। তার সম্মানে আমরা সকলেই যেন পৃথিবীতে আরও একটু বেশি দয়া দেখানোর চেষ্টা করি - ঠিক যেমন তিনি প্রতিদিন করতেন।’
ক্যাপ্রির জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৩ নভেম্বর। বড় হন রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্স শহরে। প্রায় ৫০ বছর পর ১৯৮৫ সালে রোড আইল্যান্ডে পৌর আদালতের বিচারক নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ‘কট ইন প্রভিডেন্স’ নামে টেলিভিশন শো’তে অংশ নেন ফ্রাঙ্ক। যা তুমুল খ্যাতি এনে দেয় তাকে। এমি অ্যাওয়ার্ডসের জন্যও মনোনীত হয় অনুষ্ঠানটি।
২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর তার প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার ধরা পড়ে। যা এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি তার ভক্তদের জানান এবং সুস্থতার জন্য দোয়া চান। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য দোয়া করুন... আপনার সাহায্য আমাকে এই লড়াইয়ে শক্তি দেবে।’
ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমার শরীর ভালো যাচ্ছিল না এবং আমার একটি মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টটি ভালো নয়। আমার অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে, যা ক্যান্সারের একটি ভয়ঙ্কর রূপ।’ মৃত্যুর একদিন আগেও নিজের শারীরিক পরিস্থিতি জানিয়ে সবাইকে প্রার্থনার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
‘কট ইন প্রভিডেন্স’ নামের টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। আদালতের এজলাসে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের মতো ছোটখাটো অপরাধের বিচার করতে গিয়ে দয়া, সহানুভূতি ও রসবোধ দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতেন। তার আদালতের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শত কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
বিচারের সময় তিনি প্রায়ই মামলার প্রেক্ষাপট শুনে জরিমানা মওকুফ করে দিতেন। শিশুদের বিচারকের আসনে বসিয়ে অভিভাবকের মামলা ‘বিচার’ করানোর মতো মানবিক দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছিলেন তিনি।
রোড আইল্যান্ডের গভর্নর ড্যান ম্যাককি এক শোকবার্তায় বলেন, “বিচারক ক্যাপ্রিও শুধু জনগণের সেবাই করেননি, তিনি ছিলেন মানবতার প্রতীক।”
চার দশক ধরে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালে অবসর নেন ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও। তিনি বিশ্বাস করতেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে কেবল দয়া, ন্যায্যতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে।
(ঢাকাটাইমস/২১ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন