ভূঞাপুর পৌর শহরের বাসাবাড়িতে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি, জনদুর্ভোগ

পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় টানা বৃষ্টিতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠে হাঁটু পানি জমেছে। একই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত বৃষ্টির পানি পৌর শহরের পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে করে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পৌরবাসী। বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরাও। এমন জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার দুপুরে পৌর শহরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ মাঠ, ভূঞাপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, ইবরাহীম খাঁর মাজার, ভূঞাপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘাটান্দির বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শতশত বাসাবাড়ির লোকজন। হঠাৎ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় মালামাল ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির পানিতে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তি মধ্যে পড়েছেন পৌরসভার প্রধান শহর ৪ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পানি প্রবেশ করায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। আকষ্মিক পানি প্রবেশ করায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল ও বহু বাসাবাড়ির আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
স্বেচ্ছাসেবী রায়হান তালুকদার রাসেল বলেন, ‘ভূঞাপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পিত ব্যবস্থা না থাকা ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে পানি জমে যায় এবং সেই পানির দুর্গন্ধে শহরবাসী অতিষ্ঠ। এই ভোগান্তি নিরসনের জন্য সস্প্রতি অপসারণ হওয়ার পৌরসভা মেয়র ও কাউন্সিলরের বহুবার জানানোর পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে শহরবাসীর ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
ঘাটান্দী গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘একে তো পৌর কর্তৃপক্ষের নিম্নমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, তারমধ্যে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বৃষ্টি ছাড়াই সব সময় জলাবদ্ধতার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমার ফ্রিজ ও অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’
ভূঞাপুর বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ‘শহর থেকে পানি বের হওয়ার কোনো স্থান নেই। তাই স্কুল ও কলেজ মাঠ ভর্তি হয়ে সেই পানি দোকানে প্রবেশ করে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবেই মাঝে মাঝেই হয় কিন্তু দেখার কেউ নাই।’
ঘাটান্দী উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘৪ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমরা পৌরসভায় সব থেকে বেশি কর দিলেও সারা বছরই রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকে। আর বৃষ্টি হলে ঘরে পানি ঢুকে। এই হলো উন্নয়ন। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
ফলান্দীর বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘ভূঞাপুর শহরের প্রধান জলাধারের যে খালটি ছিল যা পৌরসভার ময়লা ফেলে ভরাট করেছে। এছাড়া নানা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে পুরো খালটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এভাবে শহরের প্রতিটি খালই দখল ও ভরাট হলেও তা উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাদের এই গাফিলতিতেই বাসার নীচ তলা ডুবে গেছে। অনেক কিছু পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ও উদাসীনতায় পৌরবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।’
এসব বিষয়ে ভূঞাপুর পৌরসভার প্রকৌশলী সুকমল রায় এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর পৌরসভা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়। যেহেতু টানা বৃষ্টি, তাই জলাবদ্ধতা হয়েছে। আরও অন্যান্য ড্রেন পরিষ্কার করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ব্যবস্থা করা হবে।’
(ঢাকা টাইমস/০৪অক্টোবর/এসএ)

মন্তব্য করুন