রাজবাড়ীর জেলা-উপজেলা হাসপাতাল
জলাতঙ্কের টিকা নেই এক মাস, বাইরে বেশি দামে বিক্রি
প্রায় এক মাস ধরে রাজবাড়ী আধুনিকৃত সদর হাসপাতালে র্যাবিস ভ্যাকসিন (জলাতঙ্কের টিকা) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে ভ্যাকসিন।
জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে র্যাবিস ভ্যাকসিন সরবরাহ। ফলে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
জেলাসহ উপজেলা শহরগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী মানুষ কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিড় করলেও সেখানে মিলছে না ভ্যাকসিন। কেউ কেউ বাইরে থেকে বেশি দামে জোগাড় করলেও অনেকের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। ওই কক্ষের দরজায় সাঁটা কাগজে লেখা রয়েছে ‘গত ১৩ অক্টোবর থেকে বিড়াল, কুকুড়ের ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই’।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিটন জলাতঙ্ক টিকা না থাকার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই বেশ কিছুদিন ধরে। আমরা ঢাকায় চাহিদা জানিয়েছি। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে।’
বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বাইরে ওষুধের দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসছেন।
টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নার্স রওশন আরা বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০ রোগী জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হয়। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় সবাই বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসছে। আমরা রোগীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করি। বাইরে এই ভ্যাকাসিন ৫০০ টাকা করে বিক্রি হয়। এক ভায়াল ভ্যাকসিন চারজনের নিতে হয়।
রাজবাড়ীর মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন শেখ বলেন, ‘গত পরশু দিন আমাকে বিড়ালে কামড় দিয়েছে। আমি সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে দেখালে তিনি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষ ভ্যাকসিন নিতে গেলে তারা জানান ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। পরে চারজন গ্রুপ করে বাইরে থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন ও ৪০ টাকা দিয়ে চারটি সিরিঞ্জ কিনে আনি।’
বিড়াল কামড় দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিতে ৫-৬ দিন আগে সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা মৌসুমি খাতুন। কিন্তু চারজনের গ্রুপ করতে না পারায় টিকা না নিয়েই ফিরে যান তিনি।
গত রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে গোয়ালন্দের বাসিন্দা রতন কুমার রায়কে শিয়ালে কামড় দেয়। তিনি চিকিৎসার জন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসক তাকে ভ্যাকসিন নিতে বলেন। তাকে চড়া দামে বাইরে থেকে কিনে ভ্যাকসিন নিতে হয়।
পাংশা উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত জাহান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এখানে জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রোগী এলে আমরা তাদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেই। যদি কোনো রোগীর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে তবে তাদের বাইরের ফার্মেসি থেকে টিকা কেনার পরামর্শ দেই। টিকা কিনে আনার পর আমাদের হাসপাতাল থেকে টিকা দিয়ে দেওয়া হয়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সাপ্লাই না থাকায় সাময়িকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে। তবে বাইরে থেকে চারজন রোগী একত্র হয়ে ৪০০-৫০০ টাকা দিয়ে কিনে আনলে আমরা তাদের পুশ করে দিচ্ছি।’
(ঢাকাটাইমস/৮নভেম্বর/মোআ
মন্তব্য করুন