জামালপুরে মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ

শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠজুড়ে চোখে পড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে জামালপুরে মেলান্দহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ফসলের মাঠের দৃশ্যপট।
উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এ মৌসুমে ব্যাপক সরিষার চাষ করা হয়েছে। সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সেজে। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহূর্ত।
বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রত্যেক চাষি বেশি মুনাফা লাভ করবেন।
সরজমিনে মেলান্দহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে।
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আমন ছাড়াও জমি থেকে সরিষা ওঠার পর ওই জমিতে প্রচুর বোরোর আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ও বোরোর ফলন ভালো হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পরিমাণে সরিষার চাষ হয়েছে। এ বছর সরিষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ১২০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ১শ হেক্টর। কৃষকরা অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০, সরিষা-১৫, সোনালি সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরি-৭ আবাদ করেন।
মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কৃষক চাঁন মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সরিষা চাষে খরচ অনেক কম কিন্তু লাভটা বেশি হওয়ায় অনেকেই সরিষা চাষে আগ্রহী। খেতে একবার সার প্রয়োগ করলে আর সার দিতে হয় না। তাই অন্য ফসল থেকে পরিশ্রমও কম দিতে হয় সরিষা চাষে ।
তিনি আরও বলেন, সরিষাসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে এখানকার কৃষকরা আরো বেশি উপকৃত হতেন।
একই এলাকার কৃষক নুর-আমিন বলেন, ‘দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে উন্নত জাতগুলোর ফলন বেশি হয়। গত বছরের চেয়ে সরিষা আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করি লাভও ভালো পাওয়া যাবে। আমি ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফসল ঘরে তুলতে পারবো।’
এ ব্যাপারে মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানান, এবার মেলান্দহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় বেশি সরিষা চাষ হয়েছে। যথাসময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো প্রকার ক্ষতি না হলে এ বছর সরিষা আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সরিষা চাষের জমিগুলোর উর্বরতা বেশি থাকায় কৃষকরা বোরো চাষেও এর সুফল পাবেন।(ঢাকা টাইমস/১৭ডিসেম্বর/এসএ)

মন্তব্য করুন