জমে উঠেছে জামালপুরের 'জামাই মেলা'

প্রতিবছরের মতো এবারও তৃতীয়বারের মতো ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেদহ ইউনিয়নের পলাশপুর বাজার এলাকায় বসেছে ঐতিহ্যবাহী 'জামাই মেলা’।
পৌষ মাসের প্রথম দিন গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া সাত দিনের এই মেলা চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
স্থানীয়ভাবে এ মেলাকে অনেক নামেই ডাকা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জামাই মেলা, বৌ মেলা, পোড়াদহ মেলা বা মাছের মেলা। মেলার প্রথম দিনেই হাজারও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
জামাই মেলার মূল চরিত্র ‘জামাই’ সম্পর্কের মানুষগুলো, মেলার সময় আশপাশের গ্রামগুলোতে মেয়ে আর জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়। জামাতারা মেলা থেকে বড় বড় মাছ কেনেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। আবার জামাইকে মেলায় কেনাকাটার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি টাকা উপহার দেন। সেই টাকা দিয়ে মেলা থেকে কেনাকাটা করে শ্বশুরবাড়িতে যান জামাই।
এতিহ্যবাহী এই জামাই মেলা মাঝখানে বেশ কয়েক বছর বন্ধ ছিল। গত এবার নিয়ে তিন বছর ধরে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে আবার বসছে 'জামাই মেলা'।
এবারের জামাই মেলায় প্রায় সাড়ে ৪০০ দোকান বসেছে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে। মূল আকর্ষণ বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এক পাশে সারি সারি মাছের দোকান। বোয়াল, কাতল, বাগাড়, আইড়, চিতলসহ বিভিন্ন জাতের মাছ কিনে নিচ্ছেন জামাইরা। ৫ থেকে ২০ কেজি বা তারও বেশি ওজনের মাছ মিলছে মেলায়। হরেক প্রজাতির মাছের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে মিষ্টিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
মেলার আয়োজক কমিটি ও স্থানীয়রা জানান, এই মেলার মূল উদ্দেশ্য আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর করার। মেলা উপলক্ষে কয়েক এলাকার লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজন, মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত করে আনে। জামাই মেলা থেকে কেনাকাটা করে শ্বশুরবাড়ি যান। মেলায় আত্মীয়-স্বজনের এলাকার জামাইরাও ঘুরতে আসেন।
চরপাকেরদহ এলাকার মেয়ের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘জামাইকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি মেলা থেকে কেনাকাটা করার জন্য। মেলা উপলক্ষে কয়েকটি গ্রামের মানুষ তাদের মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করে এনেছে।’
মেলায় ঘুরতে আসা হুরাইরা বিনতে আলম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, তাদের বাড়িতে মেয়ের জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়েছে। পুরনো আত্মীয়-স্বজনকেও দাওয়াত করে এনেছে।
শ্বশুরের দাওয়াতে এসেছেন আবদুল বারিক। তিনি বলেন, 'গতকাল এসেছি শ্বশুরবাড়িতে। আজ মেলায় আসার আগে শ্বশুর টাকা দিয়েছেন। এ সময় শাশুড়ি আরও কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিয়েছেন লুকিয়ে। মেলা থেকে বড় একটি মাছ কিনেছি। শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য পান-সুপারি নিয়েছি। আমার একমাত্র ছোট শ্যালিকার জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে যাব শ্বশুরবাড়িতে।’
জামাই মেলা উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মোখলেছুর রহমান মোখলেস বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে জামাই মেলার আয়োজন করছি। গত বছরের মেলা জাঁকজমক, সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। এবার প্রথম দিনেই মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলার নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।’
(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/মোআ)

মন্তব্য করুন