আজ প্রাণের আসর একুশে বইমেলার দুয়ার খুলছে

শুরু হয়েছে ভাষাশহীদের মাস। বরাবরের মতো আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে প্রাণের আসর একুশে গ্রন্থমেলা। স্বৈরাচারবিরোধী জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে এটি বাংলা একাডেমি বইমেলার প্রথম আসর।
একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার মূল মঞ্চে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ বেলা তিনটায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বসছে বইমেলা। ইতিমধ্যে মেলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানায় একাডেমি।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া)। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা চলবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। রাত সাড়ে আটটার পর কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না।
প্রতিবার মেলায় যে পরিষেবা ও আয়োজন করে থাকে বাংলা একাডেমি, যেমন একাডেমির মূল মঞ্চ, প্রতিদিনের অনুষ্ঠান, বিভিন্ন পুরস্কার, শিশুচত্বর, শিশুপ্রহর, লেখক মঞ্চ, লিটলম্যাগ চত্বর, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকছে এবারও।
একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিন বিকেল চারটায় সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশ নেওয়া অন্যান্য প্রকাশনী ও প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করবে বই।
৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে বরাবরের মতো।
তবে এবার বইমেলার কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আছে। আগে শুধু শাহবাগ-দোয়েল চত্বর সড়কের পাশ দিয়ে মেলার প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হতো। এবার সোহরাওয়ার্দীর বিভিন্ন দিক থেকে মেলায় প্রবেশ ও বেরোনোর ব্যবস্থা থাকছে।
একাডেমির তথ্যমতে, গতবারের মেলার বাহিরপথ একটু সরিয়ে এবার মন্দির-গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। আর টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকছে।
মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে শিশু চত্বর। এখানে আছে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের স্টল। ওদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বসানো হয়েছে খাবারের দোকান। খাবারের স্টলগুলো এবার বিশেষভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে বলে জানায় একাডেমি।
এবার বইমেলা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর সড়কে কোনো ট্রাফিক প্রতিবন্ধক থাকছে না। এই রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হবে না। দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বিবেচনা করে দোয়েল চত্বর সিগন্যাল কখনো খোলা বা বন্ধ রাখা হবে। মেলা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতে বা দিনে কোনো ভারী যান চলবে না।
বইমেলা ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলায় ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তদারকি করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সিটিটিসিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য বা মাদক যাতে মেলায় ঢুকতে না পারে সেজন্য তল্লাশি চলবে, ডগ স্কোয়াডও কাজ করবে।
এছাড়াও বইমেলার প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকা জুড়ে চোখ রাখবে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
পুরস্কার
গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’, শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’, গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক শিশুতোষ গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং মেলায় স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এবারের মোট ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে বইমেলায়। গত বছরের চেয়ে ৬৬টি বেশি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছে ১৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। আগে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলা অনুষ্ঠিত হরেও ২০১৪ সাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়। তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও মেলার একটি অংশ আয়োজন করা হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই এই মাসে আয়োজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'।
(ঢাকাটাইমস/০১ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন