শরীয়তপুরে ছাত্র আন্দোলনে নিহতের কবরে ককটেল হামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫
অ- অ+

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জুনায়েদ ফরাজির কবরস্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বাড়িঘরে ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আলম মাদবরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।

মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর কোর্ট চত্বরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে জুনায়েদের বাবা শাহ আলম ফরাজী ও মা ডলি বেগম ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। তারা বলেন, ‘ন্যায়বিচার না পেলে নিহত জুনায়েদের আত্মা শান্তি পাবে না।’

স্থানীয় সূত্র, পুলিশ ও পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন শরীয়তপুরের রাজনগর ইউনিয়নের বিলদেওনিয়া গ্রামের বাসিন্দা জুনায়েদ ফরাজী। পরে ২৪ অক্টোবর নিহতের বাবা শাহ আলম ফরাজী মিরপুর মডেল থানায় ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন, যাতে রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আলম মাদবরসহ আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ, মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান আবু আলম মাদবর বিভিন্ন সময়ে তাদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই জের ধরে ১ এপ্রিল ভোরে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে উত্তেজিত জনতা চেয়ারম্যানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

শাহ আলম ফরাজী বলেন, ‘আজ আমরা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসন এখন পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারল না। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। না হলে যেকোনো সময় আমরা পুনরায় হামলার শিকার হতে পারি।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, ১ এপ্রিল সকালে ইউপি চেয়ারম্যান আবু আলম মাদবরের অনুসারীরা তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং তাদের সন্তান জুনায়েদের কবরের বেড়া ভেঙে ফেলে সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মা ডলি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর চালিয়েছে আবু আলমের লোকজন। টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। এমনকি আমার গায়ে হাত তুলেছে। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে গেছে। যখন দেখছিলাম তারা আমার ছেলের কবরের বেড়া ভেঙে ফেলছে। এমনকি তারা আমার ছেলের কবরে ককটেল বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে। মরার পরেও আমার ছেলের আত্মা শান্তি পেল না। আমি এর বিচার চাই।’

এ বিষয়ে শাহ আলম ফরাজী আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান আবু আলম ও তার চাচাতো ভাই কামাল মাদবরের বাড়িতে আমাদের লোকজন আগুন দিয়েছে—এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। আবু আলম এলাকাবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছে। তার বাড়িতে আমার কোনো আত্মীয় বা পরিবারের কেউ আগুন দেয়নি। এটা প্রমাণও করতে পারবে না। যারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ, সেই উত্তেজিত জনতাই হয়তো আগুন দিয়েছে। তবে কারা আগুন দিয়েছে, আমি বা আমার পরিবার তা জানে না।’

অন্যদিকে অভিযুক্ত রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আলম মাদবর হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে দাবি করেন, ‘আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি জুনায়েদ হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলাম না। জুনায়েদকে হত্যা করা হয়েছে ঢাকায়, আর আমি তখন ছিলাম দেশে। ১ তারিখে জুনায়েদের বাড়িতে কারা হামলা করেছে, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। বরং তারা নিজেরাই ভাঙচুর করে আমার নাম দিয়েছে। এমনকি তারা আমার ও আমার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন কার কাছে বিচার চাইবো জানি না।’

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আসলাম বলেন, বাড়িঘর ভাংচুর ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শহীদ জুনায়েদের বাবা শাহ আলম ফরাজী একটি মামলা দায়ের করেন। আমরা এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা