জুলাই শহীদ স্মরণে বারিধারায় কোরিয়ান তরুণীর ‘ক্যাফে প্যালেস’ চালু

রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন। কোলাহলমুক্ত, শান্ত, সুনিবিড় এলাকা। কোথাও কোনো পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়ে না। কিন্তু হঠাৎ একটি তিনতলা অভিজাত ভবনের প্রধান ফটকের ওপরে চোখে পড়ে শহীদ আবু সাইদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে। পানি হাতে মুগ্ধ। পাশেই জুলাই আন্দোলনের তারিখচিত্র।
না, এটি কোনো জুলাই স্মৃতি জাদুঘর নয়। এটি জুলাই শহীদদের স্মরণে কোরিয়ান তরুণী জিনার নেক্সাস ক্যাফে প্যালেস।
মিসেস জিনা জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশিই ছিলেন। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসা শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনরত মানুষের মাঝে খাবার ও পানি পৌঁছে দিয়েছেন নানাভাবে। সব সময় চেষ্টা করেছেন আন্দোলনকারীদের পাশে থাকতে।
এবার জুলাই শহীদদের স্মৃতি বুকে নিয়ে তাদের পাশে থাকতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিলেন জিনা। বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে চালু করেন নেক্সাস ক্যাফে প্যালেস। জুলাই শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার পাশাপাশি এটি থেকে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করতে চান শহীদদের পরিবারের জন্য।
বাংলা নতুন বছরের পহেলা বৈশাখে উদ্বোধন হলো জিনার এই ক্যাফে প্যালেস। প্রথম দিনে সেখানে সমাগম ঘটে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। আসেন রাজনীতিকরাও। লাল-সাদা শাড়ি পরে অতিথিদের স্বাগত জানান কোরিয়ান জিনা।
বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ৯ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর বাড়িতে অত্যন্ত সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়েছেন তার নেক্সাস ক্যাফে প্যালেস। চোখধাঁধানো নানা রঙ আর আলোর মিশেলে ফুটে আছে একেকটি কর্নার। নিচতলা ও দোতলা জুড়ে নেক্সাস ক্যাফেতে যেমন আছে পারিবারিক আবহের নানা কর্নার, তেমনি আছে করপোরেট কর্নার। বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে জমপেশ আড্ডার মেজাজ নিয়ে আছে বিশাল সোফা রুম। আর সুদৃশ্য চেয়ার-টেবিলের চিরায়ত ব্যবস্থা তো আছেই।
ডিপ্লোমেট লাউঞ্জ, অ্যারাবিক লাউঞ্জ, এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ, জিনা’স লাউঞ্জ- এমন নানা আয়োজন আছে ক্যাফে প্যালেসে। ‘গ্লাস হাউস’ নামে আছে এক বিশেষ জোন, যেন আভিজাত্যের চেয়ে বেশি কিছু।
বিভিন্ন কোণে নানা শিল্পিত শেল্ফে রাখা দেশি-বিদেশি আলোচিত বই। সেখানে যেমন আছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমাজ-অর্থনীতি নিয়ে লেখা বই, তেমনি আছে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস, এমনকি সর্ব-সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান বই। স্বনামধন্য ভারতীয় ও বিদেশি লেখকদের বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বই তো রয়েছেই।
উদ্বোধনী দিনে জিনার নেক্সাস ক্যাফে প্যালেসে এসেছিলেন জুলাই-আগস্টের শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। কোরিয়ান নাগরিক জিনার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন তারা। সাধুবাদ জানান দেশি-বিদেশি নাগরিকরা।
এই উদ্যোগকে শুধু বারিধারায় সীমাবদ্ধ রাখতে চান না জিনা। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের স্মৃতি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পরবর্তী সময়ে সারা দেশে এই ক্যাফে প্যালেসের শাখা খুলতে চান কোরিয়ান তরুণী।
(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এলএম/মোআ)

মন্তব্য করুন