সৃষ্টিশীলতার মহড়া দিল মুক্তিসরণি সাহিত্য সংঘ

নারায়ণগঞ্জের সাহিত্যাকাশে আবারও জ্বলে উঠল একঝাঁক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যেন সৃষ্টিশীলতার মহড়া দিল সাহিত্যপ্রেমীদের প্রাণের সংগঠন মুক্তিসরণি সাহিত্য সংঘ। সংঘের পঞ্চম লেখক আড্ডায় গান, কবিতা এবং সাহিত্যের উষ্ণ আলাপে বোশেখের বিকেলজুড়ে রচিত হলো এক সৃজনের উৎসব।

শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ আইডিয়াল স্কুলে অনুষ্ঠিত এই সাহিত্য আড্ডাটি যেন পরিণত হয় এক অনন্য সাহিত্যিক সন্ধ্যায়। স্বরচিত কবিতা, ছড়া, গান, গল্প ও গভীর সাহিত্যালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে আড্ডার প্রতিটি ক্ষণ।

আড্ডায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক, প্রখ্যাত ছড়াকার আতিক হেলাল।

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত আতিক হেলাল মুক্তিসরণির কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা বলেন, এই ধরনের আড্ডা আমাদের ভেতরের সৃষ্টিশীল মানুষটিকে জাগিয়ে তোলে; তরুণদের কণ্ঠে যখন সাহিত্যের গুঞ্জন শুনি, তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে ইচ্ছে করে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কবি ও বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ পাঠক রবিউল মাশরাফী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক, তরুণ কবি নিরব রায়হান।

আড্ডার প্রধান আলোচক ছিলেন- কবি ও সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সেন্টু। তিনি তার আলোচনায় সাহিত্যচর্চার বিকল্পহীনতা এবং প্রান্তিক কণ্ঠগুলোকে সাহিত্যে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

আড্ডায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সুপরিচিত কবি শিপন হোসেন মানব। স্নিগ্ধ অথচ দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, সাহিত্যের ভেতরেই জাতির আত্মা লুকিয়ে থাকে। যারা সাহিত্যচর্চা করেন, তারা নিঃসন্দেহে জাতির বিবেক।

আড্ডাটি সঞ্চালনা করেন মুক্তিসরণি সাহিত্য সংঘের সভাপতি, লেখক, সমাজকর্মী ও আইনজীবী আমিনুল ইসলাম মামুন। সূচনা বক্তব্য রাখেন সংঘের সাধারণ সম্পাদক, লেখক ও সাংবাদিক মেহেদী সম্রাট। তিনি বলেন, এই সাহিত্য আড্ডা কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি এক ধরনের সৃষ্টিশীল প্রতিরোধ— যেখানে আমরা সমাজের অন্যায় ও অন্ধকারের বিরুদ্ধে কলম ধরি।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রখ্যাত ছড়াসাহিত্যিক, সিদ্দিকিয়া পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী মালেক মাহমুদ, কণ্ঠশিল্পী পাপড়ি ভট্টাচার্য, জনপ্রিয় ছড়াকার চান মিয়া চান্দু, তরুণ লেখক ও সাংবাদিক হাসান আহমেদ প্রান্ত, কবি জানে আলম, নাট্যজন বশির খান, কবি নুর ইসলাম বাদল, কবি ইয়াকুব কামাল, সংগীতশিল্পী সুমনা, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাহিত্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন রোমেছ, কবি ইমরান শাহসহ আরও অনেক তরুণ ও প্রাজ্ঞ সাহিত্যস্রষ্টা।

আড্ডার পরতে পরতে জেগে ওঠে ভালোবাসা, প্রতিবাদ, সৌন্দর্য ও সৃষ্টির গভীরতম আবেগ। কবিতা ও গান মিলিয়ে যেন এক ধরনের কাব্যময় আন্দোলন রচনা করে এই সাহিত্য বৈঠক। কবি ও লেখকবৃন্দ তাদের স্বরচিত লেখা পাঠ করেন।

আড্ডায় আগত কবি-লেখকগণ বলেন, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং মননের নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মধ্য দিয়ে মুক্তিসরণি সাহিত্য সংঘ প্রমাণ করেছে যে— সাহিত্য কেবল বইয়ের পৃষ্ঠা নয়, এটি একটি জীবন্ত অভিজ্ঞতা, একটি চলমান আন্দোলন। এখানে প্রতিটি কলম দীপ্ত, প্রতিটি কণ্ঠ প্রত্যয়ী, আর প্রতিটি হৃদয় সাহিত্যের আলোয় উদ্ভাসিত।

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এমআর)