শীত এলেই বাড়ে টনসিলের ব্যথা, ওষুধ আছে কিন্তু ঘরেই
শীতকাল প্রায় চলে এসেছে। এই সময় বেড়ে যায় টনসিলের সমস্যা। ঢোক গিলতে ব্যথা, কথা বলতে গেলে গলায় কষ্ট— এগুলো টনসিলের ব্যথার খুব সাধারণ লক্ষণ। জিহ্বার পিছনে গলার দেয়ালের দুইপাশে গোলাকার পিণ্ডের মতো যে জিনিসটি দেখা যায়, সেটাই হলো টনসিল।
শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটা অংশ এই টনসিল। মুখের ভেতরেই চারটি গ্রুপে লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড নামে এর অবস্থান। এই টনসিলগুলোর কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে বলে টনসিলাইটিস।
চিকিৎসকের মতে, কারও টনসিল দেখা দিলে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে যত দিন সুস্থ না হবে। মুখের হাইজিন (মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য) বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে।
এটাকে মাউথ ওয়াশ বলা হয়, যা দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। সাধারণ স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। লেবু বা আদা চাও খেতে পারেন। গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
যেহেতু তীব্র ব্যথা থাকে এবং জ্বর থাকে, সে ক্ষেত্রে জ্বরের ওষুধসহ কিছু ওষুধ দেওয়া হয় এবং এটা ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। ওষুধ নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
টনসিলের ব্যথা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তবে হাতের কাছে সব সময় চিকিৎসক মেলে না। সব সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো অবকাশও থাকে না। তাই ঘরোয়া উপায়েও অনেক সময় আস্থা রাখতে হয়।
মধু
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণে ভরপুর মধু শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটা দিয়েই গলার টনসিল দূর করা যায়। দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। চাইলে পানিতে হলুদ ও মধু মিশিয়েও পান করতে পারেন।
লবণ পানি
মুখের সমস্যা দূর করতে লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে গার্গল করা খুবই কার্যকরী। এক গ্লাস গরম পানিতে কিছুটা লবণ মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিন বার গার্গল করুন। গরম পানিতে নিয়মিত গার্গল করলে গলায় আরাম পাওয়া যায়।
হলুদ মেশানো দুধ
টনসিলের ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী একটি পানীয় হল হলুদ মিশ্রিত দুধ। গলাব্যথা হলে শক্ত কোনও খাবার একেবারেই খাওয়া যায় না। এই সময় গরম দুধ খেলে গলায় আরাম পাওয়া যাবে। তবে শুধু দুধ না খেয়ে তাতে মিশিয়ে নিতে পারেন হলুদ। এর অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যে কোনও জীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে।
পুদিনা
ঔষধি গুণে ভরপুর পুদিনা। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা দ্রুত গলার সমস্যা নিরাময়ে সহায়ক। দিনে দুই থেকে তিন বার পুদিনা চা পান করলে টনসিলের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
গাজর
গাজরে রয়েছে অ্যান্টি-টক্সিন গুণ, যা টনসিল কমাতে খুবই কার্যকর বলে মনে করা হয়। গাজরের রস টনসিলের ব্যথা দূর করে।
গ্রিন টি-মধু
তিন কাপ পানিতে এক চা চামচ গ্রিন টি এবং এক চামচ মধু দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিন। এই চা একটা ফ্লাস্কে রেখে দিন। উষ্ণ থাকাকালীন অল্প অল্প করে বার বার খান। গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট; তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি শরীরের জীবাণুর সঙ্গে লড়াইও করে। মধুর অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান প্রদাহ কমায় টনসিলের।
লেবু এবং মধু
ওজন কমাতে এই দুটি উপকরণের জুড়ি মেলা ভার। তবে মেদ ঝরানো ছাড়াও লেবু এবং মধু টনসিলের ব্যথা কমাতেও সমান উপকারী। এক গ্লাস উষ্ণ জলে গোটা একটি পাতিলেবুর রস, এক চা চামচ মধু ও অল্প নুন মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ দিনে তিন-চার বার খেতে থাকুন। গলাব্যথা বা টনসিলের কষ্ট কমবে অনেকটাই।
লেবু বা আদা
মাথায় রাখতে হবে ঠান্ডা লাগানো যাবে না। সমস্যার শুরুতেই লেবু বা আদা চা পান করলে আগাম উপশম মিলতে পারে। তবে সমস্যা না মিটলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মেথি
মেথি টনসিলের ব্যথা রোধ বেশ উপকারী। এক লিটার পানিতে তিন চা চামচ মেথি দিয়ে জ্বাল দিন। এটি ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট জ্বাল দিতে থাকুন। কুসুম গরম থাকা অবস্থায় এটি দিয়ে কুলকুচি করুন। মেথি গলা ফুলা এবং ব্যথা কমিয়ে দেবে।
(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন