১০ টাকার চালের কার্ড সংশোধনেও ‘জালিয়াতি’

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও থেকে
| আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৩৯ | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৩৩

হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণে দেয়া খাদ্যবান্ধব কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর কার্ড সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ঠাঁকুরগাও প্রশাসন। কিন্তু এই সংশোধনীর নামে হতদরিদ্রদের ঠকিয়ে আবারও বিত্তবানদেরকেই কার্ড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিত্তবানদের কার্ড ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার পরও কার্ড ফেরত দেয়ার উদাহরণও কম।

১০ টাকা কেজি দলে চাল দিতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২১ টি ইউনিয়নে ২৭ হাজার ২৪৪ টি কার্ড বরাদ্দ দেয় সরকার। এসব কার্ডধারীদের মাসে ৩০ কেজি করে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। শুরুতেই ইউপি চেয়ারম্যান ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিত্তবানদের মাঝে কার্ড বিতরণের অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়ে প্রশাসনের।

এরপর বিত্তবানদের কাছে ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড থাকলে তা ফেরত চেয়ে গত ১৮ অক্টোবর রুহিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করে উপজেলা প্রশাসন। আর কার্ড ফেরতপ্রাপ্তি সাপেক্ষে সংশোধনের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। খাদ্য বিভাগের চাপের মুখে সদর উপজেলার ২১ ইউনিয়নের দুই হাজার ১৯৪ টি কার্ড ইউপি চেয়ারম্যানরা সংশোধন করেছেন বলে দাবি করা হলেও তৃণমূলে হতদরিদ্রদের অভিযোগ থামেনি। এবার অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিরা বিত্তবানদের কার্ড বাতিল না করে দরিদ্রদের নাম বাতিল করে আবারও প্রভাবশালীদের মাঝে বিতরণ করেছেন।

১নং রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহর গ্রামের ভ্যান চালক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে কার্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বার চাল উত্তোলন করতে গিয়ে দেখি আমার কার্ড বাতিল করা হয়েছে।’

মাজেদুল ইসলাম জানান, নিলুফা ইয়াসমিন নামে একজনকে ওই কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার একটি পাকা বাড়ি রয়েছে এবং স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন।

একই গ্রামের শহিদুল ইসলামও হতদরিদ্রের কার্ড পেছেন। তার দুই ছেলে দুই বৌমাসহ চার জনই সরকারি চাকুরি করেন এবং বাড়িঘর পাকা। তার মতো পাকা বাড়ির মালিক শামসুজ্জোহা, এমাজ উদ্দীন, আনারুল, পারুল, আজম, সম্পা, আবুল কালাম আজাদ, কামরুল, বজলু, ইলিয়াস, রানাদের কার্ড এখনো বহাল রয়েছে।

একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম (কার্ড নং ১০০) অভিযোগ করে বলেন, তার দুই রুম বিশিষ্ট পাকাবাড়ি থাকায় তার কার্ড বাতিল করে ছয় রুম বিশিষ্ট পাকাবাড়ির গৃহকর্ত্রী শাহিনা বেগমের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঘনিমহেশপুর গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, তিনি হতদরিদ্র হওয়ায় তার স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামে কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নেতারা পাকাবাড়ির মালিকদের কার্ড বাতিল না করে সংশোধনের নামে তার স্ত্রীর কার্ড বাতিল করেছেন। অথচ প্রতিবেশী মিনারা বেগম, হিটলার দাস, শরৎ চন্দ্র, গোপাল চন্দ্র রায়, ধনি গোপাল রায়, গয়া কাপালী, লিপি রানী, ঝরনা দাস, পোল দাস, কুথা দাস, জনাস দাস, ফেরোজা বেগম, নাদিরা বেগম, বিলকিস বানুসহ অন্তত ২০ জনের পাকাবাড়ি থাকার পরও তারা ১০ টাকা কেজির চাল তুলেছেন।

নিরেন দাস নামে একজন জানান, তিনি আওয়ামী লীগ করেন বলে তাকে কার্ড দেওয়া হয়নি। অথচ ঘনিমহেশপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ ঢাকায় চাকরি করলেও তার স্ত্রী তাসমিন আক্তারের নামে কার্ড দেওয়া হয়েছে। কুজিশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মতর্ৃুজা দুলাল তার স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামে ১০ টাকা কেজির কার্ড নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, সারা ইউনিয়নে অন্তত ৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতার নামে কার্ড সচল রয়েছে।

মজিরন বেগম নামে অপর একজন বিধবা জানান, তার স্বামী নেই। একমাত্র ছেলে অসুস্থ। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাকে কার্ড দেওয়া হয়নি। তার প্রতিবেশি অলিম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তির দুই ছেলে নজরুল ইসলাম, আলা উদ্দীন ও স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে কার্ড নিয়েছেন। তাদের বাড়িঘরও পাকা। তাদের কার্ড বাতিল করা হয়নি।

একইভাবে ক্রুজিশহর গ্রামের খমিজ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি তার নিজের নামে, ছেলে রেজাউল ইসলাম, তোফাজ্জল এবং অপর ছেলে তরিকুলের নামে একই বাড়িতে চারটি কার্ড পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন জানান, ‘সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়মের কারণে চেয়ারম্যানদের কার্ড সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুই হাজার ১৯৪টি কার্ড ফেরত দিয়েছেন। এরপরও বিত্তবানদের নাম থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও খাদ্য বান্ধব কমিটির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘মাইকিং করার পরও যেসব বিত্তবান কার্ড ফেরত দেননি সেগুলো নজরে এলে কার্ডধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৮ অক্টোবর/ প্রতিনিধি/ জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :