আজ মির্জাপুর গণহত্যা দিবস

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ মে ২০১৭, ১২:০৩
অ- অ+

আজ ৭ মে মির্জাপুর গণহত্যা দিবস। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে এই দিনে মির্জাপুর এবং আন্ধরা গ্রাম দুটিতে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ গ্রাম দুটির ৩১ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে।

এছাড়া একাত্তরের ৭ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত এ উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন থেকে ভাতগ্রাম কেআরএস ইনস্টিটউশনের প্রতিষ্ঠাতা জগবন্ধ রায়সহ অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে তারা হত্যা করে। এসময় হানাদার বাহিনী অধিকাংশ বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে সদা কোলাহলময় জনপথগুলো ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত করে।

এদিকে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষিত হওয়ায় এ উপজেলার শহীদ পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ২৫ মার্চ যাতে আন্তার্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পায় সেজন্য সরকারে কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

১৯৭১ সারের ৭ মে ছিল শুক্রবার। উপজেলা সদরের হাটবার। দুপুরের দিকে অধিকাংশ মানুষই সওদা বেচাকেনার জন্য হাটে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ হাটে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন আইয়ুব ও তার স্থানীয় দোসর মাওলানা ওয়াদুদের নেতৃত্বে একটি দল উপজেলা সদরের মির্জাপুর এবং আন্ধরা গ্রাম দুটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। তারা যাকে পাচ্ছিল গুলি করে হত্যা করছিল। যেন পাখি শিকারে নেমেছে! সঙ্গে চলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এতে সদা কর্মচঞ্চল-কোলাহলময় গ্রাম দুটি মুহূর্তেই বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়। ঘাতকদের এই দলটিই ওইদিন সন্ধায় নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা এবং কর্মচারী গৌর গোপাল সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ঘাতকদের এই দলটি পরের দিন বাসায় আওয়ামী লীগের অফিস থাকার অপরাধে এবং লুটপাটের প্রতিবাদ করায় মাজম আলী সিকদারকে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ৯ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক পুষ্টকামুরী গ্রামের আবুল হোসেনের বৃদ্ধ পিতা জয়নাল সরকারকে ঘাতক বাহিনী ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে এ উপজেলার ভাতগ্রাম, বাগজান, পাঠানপাড়া, মির্জাপুর, আন্ধরা, পুষ্টকামুরী এবং দূর্গাপুরসহ আশপাশের গ্রাম থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ধরে এনে ভাতগ্রাম কেআরএস ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠাতা জগবন্ধু রায় এবং তৎকালীন সময়ে উপজেলা সদরের বড় মহাজনী ব্যবসায়ী রাখাল চন্দ্র সাহাসহ অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।

এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নয় মাসে এ উপজেলার গুড়ান, সাটিচড়া, পুষ্টকামুরী চরপাড়া, হিলড়া, লক্ষিন্দা, শেওড়াতৈল, বাঁশতৈল নয়াপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের দেড়শতাধিক নিরপরাধ বাঙালিকে ঘাতক পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরা হত্যা করে।

এদিকে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২৫ মার্চ সরকার গণহত্যা দিবস ঘোষণা করায় এ উপজেলার শহীদ পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেছেন।

একই সঙ্গে তারা ২৫ মার্চ যেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় তার জন্যও সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। শহীদ জগবন্ধু রায়ের পৌত্র কল্লোল রায়, শহীদ মাজম আলীর ছেলে মো. আলী হোসেন, শহীদ জয়নাল সরকারের পৌত্র মাজহারুল ইসলাম শিপলু, গৌর গোপাল সাহার ছেলে সাহা প্রাণ গোপাল, শহীদ সুদাম চন্দ্র সাহার ছেলে সঞ্জিব সাহাসহ এ উপজেলার শহীদ পরিবারের সদস্যরা ২৫ মার্চ যাতে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পান তার জন্যও সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৭মে/প্রতিনিধি/ইএস)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
১৩ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট: ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধ, আটকা শতাধিক যানবাহন
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের বৈঠক, আলোচনা হলো যা নিয়ে
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির দাওয়াত পেলেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা