জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে কৃষকদের বিক্ষোভ
চলছে আলু সেচের মৌসুম। কৃষকরা মাঠের মধ্যে গভীর ও অগভীর নলকূপের মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে রাতে মাঠেই রাত্রি যাপন করছেন। এরই মধ্যে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট মাঠে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিনটি গভীর নলকূপের মিটার চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।
রাতেই পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোনো গুরুত্ব না দেওয়ায় বুধবার সকালে গভীর নলকূপের মালিক ও কৃষকরা কালাই উপজেলার পুনট-শান্তিনগর রাস্তার মাথায় জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। প্রায় একঘণ্টা ধরে চলে এ অবরোধ কর্মসূচি। এতে মহাসড়কের দুইপাশে প্রায় শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
চুরি যাওয়া গভীর নলকূপের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গভীর ও অগভীর নলকূপের মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। পুলিশ এ পর্যন্ত চক্রের একজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে গিয়েও নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে মালিকদের। তাই তারা নিজেরাই এই শীতে মাঠের মধ্যে মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে রাত্রী যাপন করছে। তারপরও চুরি ঠেকাতে পারছে না।
তারা জানান, গত রাতে পুনট পূর্বপাড়া মাঠ থেকে শাহজাহান আলী, সরদারপাড়া মাঠ থেকে আজিজার রহমান ও সড়াইল মাঠ মিলে তিনজনের গভীর নলকূপের মিটার ও সিভার তার চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। রাতে পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। সকালে কৃষকরা মাঠে এসে সেচ দিতে না পেরে ঘুরে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
তারা আরও জানায়, এসব বৈদ্যুতিক মিটার চুরির সময় চোরেরা তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর রেখে যায়। সেই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে মিটার ফিরে পেতে টাকা দাবি করেন। টাকা দিলেই মিটার ফেরত পাওয়া যায়। পুলিশকে এসব ফোন নম্বর দেওয়া হলেও কোনো চোর গ্রেপ্তার হয়না।
চুরি যাওয়া মিটারের মালিক শাহজাহান আলী বলেন, রাতে আমরা ঘরের ভিতরেই ছিলাম, কুয়াশা ছিল অনেক, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কখন যে চোরেরা এসে মিটার নিয়ে গেছে তা একটুও টের পাওয়া যায়নি। রাত দেড়টার দিকে পুলিশকে ফোন করে বলার পরও তারা আসেনি। পুলিশের উপর আক্ষেপ করেই মালিক ও কৃষকরা আজ মহাসড়ক অবরোধ করেছে।
চুরি যাওয়া আরেক মিটারের মালিক আজিজার রহমান বলেন, মিটার চুরির পর চোরদের টাকা দিয়ে মিটার নিয়ে আসলেও বিপদ। আবার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে নতুন করে মিটার ব্যাপারে আবেদন করলে অনেক ঝামেলা। আসলে আমরা যাবো কোথায়। গভীর নলকূপ স্থাপন করে আমরা সাকের করাতে পড়েছি।
অবরোধে আটকে পড়া ঢাকাগামী শ্যামলী পরিহবনের যাত্রী শাহ আলম বলেন, প্রায় একঘণ্টা ধরে এখানে আটকে আছি। ঢাকায় বিকেল ৪টার মধ্যে না পৌঁছালে আমার অনেক ক্ষতি হবে। দেখা যাক কতক্ষণে এখান থেকে বাস ছাড়ে। না হলে বাড়িতে ফিরে যাবো।
জয়পুরহাট পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির কালাই জোনাল অফিসের ডিজিএম হামিদুল হক বলেন, প্রতিনিয়ত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে। আমরা চুরি রোধে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত সচেতন করছি। এলাকায় মাইকিংও করছি। প্রতিটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
কালাই থানার ওসি তদন্ত মো. মাহবুবর রহমান সরকার বলেন, চুরির ঘটনার সাথে মহাসড়ক অবরোধের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কেন মহাসড়ক অবরোধ করেছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। মিটার চুরির ঘটনা সত্য, এলাকাবাসী ও নলকূপ মালিকদের চুরির বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/এমআই)
মন্তব্য করুন