না.গঞ্জে রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে হামলা, আহত পাঁচ
নারায়ণগঞ্জের উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে নগরীর খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বুধবার নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। এসময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
এসময় অনুষ্ঠানস্থলে চেয়ার ভাংচুর ও সাউন্ড সিস্টেমে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। বুধবার বিকেলে নগরীর চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বিকেলে নগরীর চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় সেখানে চেয়ার বসানো এবং সাউন্ড সিস্টেম লাগানোর কাজ চলছিল। বিকেল সোয়া চারটার দিকে সাংসদ শামীম ওসমানের অনুগত নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক হাবিবুর রহমান রিয়াদের নেতৃত্বে শতাধিক ক্যাডার লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল বের করেন। তারা চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভের সামনে মাইক থেকে নিহত ত্বকীর বাবা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে শহীদ মিনারে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এসময় তারা প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করে এবং সাউন্ড সিস্টেমের স্পিকার ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে উপস্থিত জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, সহ-সভাপতি ফারজানা আক্তার এবং উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ বনিককে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের শহীদ মিনার দখল করে রাখায় উন্মোষ সাংস্কৃতিক সংসদ তাদের রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান করতে পারেনি।
এই ঘটনায় সন্ধ্যা ৭টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদ। এসময় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সহ-সভাপতি সুজন রায় বিকু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজীব খান, সদস্য দীপক ভৌমিক, হামলার শিকার জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, সহ-সভাপতি ফারজানা আক্তার এবং উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ বনিক উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু বলেন, আমরা রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে খুলনার কৃতি ব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদ অসিত বরণ ঘোষকে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। আমরা পূর্ব থেকে সিটি করপোরেশন থেকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি এবং জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে শহীদ মিনারে উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের হামলায় আমাদের ৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের নগরীর খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা রবীন্দ্রনাথের ওপর হামলার শামিল বলে আমরা মনে করি। যেখানে সরকারিভাবে রবীন্দ্র জয়ন্তী অন্ষ্ঠুান পালন করা হয়, সেখানে ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের এই ধরনের অনুষ্ঠানে হামলা আমরা নিন্দা জানাই। আমরা এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
হামলার শিকার জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া সেতু অভিযোগ করেন, আমরা শহীদ মিনারে বসেছিলাম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাত্রলীগের ক্যাডাররা আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং এলোপাতাড়ি লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এসময় চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেমে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুশপুত্তলিকা দাহ করে। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা আমাদের ওপর এই হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক হাবিবুর রহমান রিয়াদ জানান, রফিউর রাব্বি শহীদ মিনারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে বিভ্রান্তিকর ঊক্তব্য দিচ্ছে। একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নিয়ে গালাগালি ও বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছি। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এটা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কোন কর্মসূচি ছিল না। আমরা রফিউর রাব্বির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছি। তাকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তাকে কোনোভাবেই শহীদ মিনারে উঠতে দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে কোনো পক্ষ আমাদেরকে অবগত করেনি। উন্মেষের নেতাকর্মীরা আসার আগেই ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে। কোনো হামলা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন। এই ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
(ঢাকাটাইমস/১১মে/প্রতিনিধি/ইএস)
মন্তব্য করুন