কওমি সনদের স্বীকৃতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট খারিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মে ২০১৭, ১৭:৩২ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০১৭, ১৬:২৪

কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্ট্যাডিজ এবং আরবি) সমমান দিয়ে জারি করা গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো.আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

গত ১৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট জারি করে। এই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মো. ফজলুল হক নামের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক অনুসারী হাইকোর্টে রিট করেন।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, দাওরায়ে হাদিসের ডিগ্রির মান বাস্তবায়নে নিয়োজিত কমিটি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন না। এই কমিটির তিনটি কার্যপরিধি ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি যেসব মাদরাসাকে নিবন্ধন দেবে কেবল তারাই দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রির সমমান পাবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই সমমান দেয়ার লক্ষ্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি (পদাধিকার বলে) ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটিতে সরকারের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এ কমিটি সনদবিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বলে বিবেচিত হবে। কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বলে বিবেচিত হবে। এ কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে। কমিটি সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক উপ-কমিটি গঠন করতে পারবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়গুলো অবহিত করবে কমিটি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ কমিটি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারও আগে ২৮ মার্চ কওমিপন্থি শীর্ষ আলেম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি ধরে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি এর সমমান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

১৭ সদস্যের এই কমিটির চেয়ারম্যান হলেন- দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (বেফাক) সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কো-চেয়ারম্যান বেদাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী। এছাড়া কমিটিতে বেফাক থেকে পাঁচজন, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গার বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার দুজন। ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া চট্টগ্রামের দুজন। সিলেটের আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম থেকে দুজন, তানজিমুল মাদারিসিল কওমিয়া উত্তরবঙ্গের দুজন, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ থেকে দুজন। এসব বোর্ডের সভাপতি ও মহাসচিবরা সদস্য হিসেবে পদাধিকার বলে থাকবেন। তবে বোর্ড চাইলে তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদেরও দিতে পারবে। এছাড়া চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবেন। তবে এ সংখ্যা ১৫ জনের বেশি হবে না।

এর আগে ২০১২ সালের ১৫এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। কওমি মাদরাসা শিক্ষা আইন-২০১৩ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ওঠে। তখন স্বীকৃতির বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। এরপর তা মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তার আগে ২০০৬ সালের ২৯আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুমতি নিয়ে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যার নম্বর শাখা-১৬/বিবিধ-১১(৯)/২০০৩(অংশ)-৮৮৭। এতে বলা হয় কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে এমএ (ইসলামিক স্টাডিজ/সাহিত্য) সমমান হিসেবে ঘোষণা করা হলো। কিন্তু তার বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি তৎকালীন সরকার।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমা শিক্ষা ও কালচারের আগ্রাসন থেকে মুসলমদের রক্ষায় ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই সর্বপ্রথম কওমি মাদরাসা। সে ধারাবাহিকতায় ১৯০১ সালে বাংলাদেশের প্রথম কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসা আছে। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। তবে বর্তমানে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৮ হাজারের মতো এবং ২০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে। তবে সনদের স্বীকৃতি না থাকায় কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/এমএবি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই: আপিল বিভাগ

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সাম্রাজ্যের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট 

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ

আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোয় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

তিন মাসের ব্যবধানে আরেক মামলায় খালাস পেলেন গোল্ডেন মনির

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যামামলা: আপিল শুনানি দ্রুত করতে আসামির আবেদন

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :