ঘর হারালো দুশো পরিবার
ফুটপাতের ফল বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া। ছোট কন্যা সন্তান নিয়ে দীর্ঘ তিন বছর ধরে থাকেন পূর্ব নাখালপাড়ার এক বস্তিতে। হঠাৎ গতকাল দুপুরে জানতে পারেন আজ ভেঙে ফেলা হবে তাদের থাকার ঘরটা। কিন্তু কেন? কারণ সড়ক ও জনপদ বিভাগের দখলকৃত জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছিল এ বস্তি। রাজধানীর পূর্ব নাখালপাড়ায় সওজের গ্যারেজের পেছনে আড়াই একর জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে নামে ঢাকা জেলা প্রশাসক, রাজউক ও সওজ। সকালের দিকে তিনটা বড় বড় বুলডোজার, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট সব হাজির। বেলা ১২ টায় শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। চোখের নিমিষে ভেঙে ফেলা হলো বাচ্চু মিয়ার দীর্ঘদিনের ঘরটা। তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসারের কিছু জিনিস অন্যত্র সরাতে পারলেও বের করতে পারেননি অনেক দরকারি আসবাবপত্র। সেগুলো আর ফেরতও পাওয়া যাবে না, সব ভেঙে চুরে গেছে।
বাচ্চু মিয়ার মতো এখানে বসবাস করতো প্রায় দুশো পরিবার। কেউ দিনমজুর, কেউ গার্মেন্টস কর্মী, কেউ বা পরিবহন শ্রমিক। মাত্র একদিনের নোটিশে বস্তির বাড়ি গুলো ভেঙ্গে ফেলায়, আশ্রয়হীন হয়ে গেছে পরিবারগুলো।
এদিকে বস্তির বাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেলার পর স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এখানকার মানুষগুলো। বস্তির পাশেই গড়ে ওঠা পূর্ব নাখালপাড়া জামে মসজিদ ও কবরস্থানের পাশে খোলা আকাশের নিচে তাদের এই মুহুর্তের বসবাস। এই তীব্র গরমে দিশেহারা হয়ে আছে সদ্য ঘরহারা শত শত শিশু, নারী-পুরুষ।
গার্মেন্টস কর্মী শাহজাহান ঢাকাটাইমসকে জানান, তার স্ত্রী এবং তিনি একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। হঠাৎ গতকালের একদিনের নোটিশে এখান বস্তির ঘর গুলো ভেঙ্গে ফেলায় পাঁচজনের পরিবার নিয়ে দিশেহারা। সামনে রোজা এবং নতুন মাস এখন বাড়ি ভাড়া নিবেন কোথায় এই শঙ্কা তার মনে।
শাহজাহান বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে বাড়িতে রান্না বান্না কিছুই হয়নি। সকাল থেকে ঘরের মালামাল সরিয়ে কবরস্থানের পাশে রাখছি। এখন বৃদ্ধ বাবা-মা নিয়ে কোথায় যাবো তাও জানি না। আবার কারখানায়ও যেতে হবে, চাকরি বাঁচানো যাবে না নাহলে।’
একদিনের নেটিশে কেন বাড়িগুলো ভাঙা হলে এমন প্রশ্নে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকোশলী সিনথিয়া আজমেরি খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একদিনের নোটিশ না, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বলা হচ্ছে এই জায়গা উচ্ছেদ হবে। কিন্তু তারা আমাদের কর্মচারী নোটিশ নিয়ে এলে নোটিশ রাখে না কিংবা মোখিক ভাবে বলতে আসলে তাদের লাঞ্চিত করে। সর্বশেষ গতকাল দুপুরে মাইকিং করে তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে। তার সময় মত সরে যায়নি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
ঢাকাটাইমস/২৩মে/সিসা/কেএস