লঞ্চে হকারদের গায়ে কালি দিয়ে চাঁদা আদায়

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুন ২০১৭, ১৬:৩৩ | প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০১৭, ১৩:৩৪

ঈদে নাড়িরটানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। স্বভাবতই লঞ্চে হকারদেরও পদচারণা বেশি। যে কারণে অন্য সময়ের চেয়ে ঘাটে হকারি করতে চাঁদার পরিমাণও বেশি।

স্বভাবিক সময়ে ঘাঁটে হকারদের ১০০ টাকা দিতে হলেও ঈদে তা দ্বিগুণ হয়েছে। কারো কারো তিনগুণ পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে চাঁদা। চাঁদা না দিলে তারা লঞ্চে উঠতে পারবে না।

অন্য সময় ঘাঁট নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সংগঠন থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো সংগঠনকে চাঁদা দিতে হয়। সাধারণত যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে তাদের লোকজনের হাতে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ থাকে।

বিএনপি আমলে ঘাট শ্রমিক দল নিয়ন্ত্রণ করলেও গত দুই আমল ধরে ঘাট শ্রমিক লীগের দখলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। এরবাইরেও একাধিক নামে বেনামে শ্রমিক সংগঠন ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার সবগুলোর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন।

ঘাটে এক সংগঠনকে চাঁদা দিলে হকারদের অন্য কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। অলিখিত এমন নিয়ম ঈদের সময় আর কার্যকর নেই। যে কারণে একাধিক সংগঠনকে চাঁদা দিয়ে তাদের হকারি করতে হয়।

তবে একগ্রুপকে চাঁদা দেয়ার পর হকারকে যেন কেউ ঝামেলা না করে এজন্য অভিনব পদ্ধতি হাতে নিয়েছে শ্রমিক নেতারা। নির্ধারিত লোক যে হকার চাঁদা দিয়েছে তাদের শরীরে লাল ও কালো রঙ দিয়ে দাগ দিয়ে দিচ্ছেন। এই হকার যে চাঁদা দিয়েছে রঙয়ের দাগ দেখলেই দাগ দেয়ার দায়িত্বে থাকা লোকজন নিশ্চিত হতে পারে।

প্রায় সাত বছর সদরঘাটে পান, সিগারেট বিক্রি করে গতবছর থেকে পটুয়াখালীর বাউফলে নিজ এলাকায় ব্যবসা করছেন শরিফুল। ঈদে ব্যবসা ভালো হবে এই চিন্তায় ঢাকা এসে লঞ্চে মুড়ি, ছোলা বিক্রি করছেন তিনি।

ঢাকাটাইমসকে শরিফুল বলেন, ঢাকা থেকে দেশে গিয়ে মুড়ি বিক্রি করি। ঈদে ভালো ব্যবসা হবে তাই ঢাকায় মুড়ি আর ছোলা বিক্রি করতে করতে যাইতেছি।

শরিফুলের কাছ থেকেই হকারদের গায়ে কালির দাগ দিয়ে চাঁদা তোলার কথা জানা গেল। মুড়ির প্যাকেটের দাম অন্যসময়ের চেয়ে বেশি চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মামা ২৫০ ট্যাহা দিয়ে লঞ্চে ওঠা লাগছে। আগে তো একশো দিলেই হইত।'

পরে নিজের লাল রঙয়ের শার্টে কালো কালির দাগ এবং শরীরে লাল রঙয়ের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, ‘এক জায়গায় দিলাম ১৫০ টাহা, আর এক জায়গায় ১০০। টাহা না দিলে লঞ্চে উঠতে পারবেন না। যতবড় কুতুব হন না কেন।’

কারা নেয় চাঁদা- এমন প্রশ্নে শরিফুল বলেন, নেতারা নেয়। দাগ দিছে না এহন আর কেউ জ্বালাইবে না।

কথা বলে জানা যায়, ৫০ কেজির মতো মুড়ি, পাঁচকেজির মতো ছোলা নিয়ে লঞ্চে উঠেছেন শরিফুল। সব মিলিয়ে চারহাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বিক্রি ভালো হলে ১০ হাজার টাকার মতো লাভ হওয়ার আশা আছে তার।

পেয়ারা বিক্রেতা সুমনও জানালেন ঈদের জন্য চাঁদা বেশি দিয়ে লঞ্চে বেচাবিক্রি করতে হচ্ছে। ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগে ৫০ থেকে শুরু কইরা ১০০টাকা দেয়া লাগতো। এখন নিম্নে ১০০ দেয়া লাগবে।

ঢাকাটাইমস /২৪জুন/ বিইউ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :