মোস্তাফিজদের ফেরাতে পারবেন ওয়ালশ?

মিনহাজ ইসলাম লিও
| আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৭, ২২:৪৪ | প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০১৭, ২২:২৪

চেনা মুস্তাফিজ-তাসকিনরা আজ যেন একদম অচেনা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম দুই ম্যাচে সব বোলার মিলে তুলতে পেরেছিলেন সর্বসাকুল্যে তিনটি উইকেট! বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে সেমিতে মুস্তাফিজকে তো রীতিমত বেধড়ক পিটিয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। এক মাশরাফি বাদে অন্য আর তিনজন মুস্তাফিজ, রুবেল, তাসকিনরা নিজেদের শুধু খুঁজেই ফিরেছেন, থেকে গেছেন ম্রিয়মাণ। এখানে সবচেয়ে বড় কিন্তুটা হচ্ছে, আমাদের নতুন পেস বোলিং কোচ সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশ তাহলে কি করেছেন এ সময়?

মুস্তাফিজের আগের সেই কার্টার নেই, ঘরোয়া ক্রিকেটের তিনজন বিশেষজ্ঞ কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং সারোয়ার ইমরানের ভাষ্য হচ্ছে, মূলত লাইন লেংথের কারণেই দ্য ফিজ তার ফর্ম হারিয়েছে। মুস্তাফিজ ইনজুরিতে পড়ার আগেও উইকেটের অনেক কাছ থেকে বল করত এবং বল স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প রাখার চেষ্টা করত। ফলে বোল্ড করার বা এলবির চান্স অনেক বেশি থাকত। কিন্তু এখন স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে বল করায় এগুলো যেমন মিস করছে ফিজ, তেমনি তার কার্টারগুলোও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। হায়দ্রাবাদ সানরাইজার্সকে আইপিএল জেতানো সেই ফিজ আজ যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। তার সেসব অসাধারণ সেøায়ার কিংবা আগুনে ইয়র্কার, যার ফলে বিশ্বের নামিদামি প্লেয়াররা ক্রিজে মুখ থুবড়ে পর্যন্ত পড়েছেন। তা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হলে ফিজের শক্তিশালী দিকগুলো নিয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। একুশ বছর বয়সী এই বিস্ময় বালককে স্বরূপে ফেরাতে বিসিবি, টিম ম্যানেজমেন্ট তথা বোলিং কোচকে দ্রুতই সঠিক সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বাম কাঁধে সার্জারি করার আগে যে বোলার ১২.০৪ গড়ে ৯টি ওডিআই খেলে নিয়েছেন ২৬ উইকেট, আজ সেই ফিজ সার্জারির পর ১৩ ম্যাচ খেলে ৩০.৫৫ গড়ে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দলের প্রধান বোলিং স্তম্ভ হয়ে যাওয়া এই সেনসেশনকে ফেরাতে শিগগিরই বড় কোনো পদক্ষেপ না নিলে তিনিও যে সেই রহস্যময় অজন্তা মেন্ডিসের মতো হারিয়ে যাবেনÑ এ বাক্য খোদ ফিজ-ভক্তরাই আওড়াচ্ছেন।

আগুনে পেসে বোলিং করে হঠাৎই গতিদানব বনে যাওয়া তাসকিনও যেন খেই হারিয়ে ফেলা এক সৈনিক, গড়পড়তা যাকে একই ধরনের ডেলিভারি করতে দেখা যায়! অথচ ওয়ালশ কোচ হওয়ার পর এই তাসকিনেরই কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়ার কথা। সেখানে প্রতিটি বল করার পরে তাসকিনের কাছে গিয়ে তাকে পরের বলের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়ে আসতে হয় মাশরাফি-সাকিবদের!

রুবেল হোসেনও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলে ফিরে খুব যে আলো ছড়াতে পেরেছেন তাও কিন্তু নয়, তারপরও তিনি অন্য দুইজনের থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। একপ্রান্ত থেকে কিছুটা চাপে রাখার চেষ্টা করেছেন ব্যাটসম্যানদের। ক্যাপ্টেনের নির্দেশনামতো বল করে গেছেন। কিন্তু তা দিয়ে শেষ অবধি কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এখন কথা হচ্ছে, টিমে স্পেশাল পেস বোলিং কোচ হিসেবে কোর্টনি ওয়ালশের মতো একজন লিজেন্ড থাকা সত্ত্বেও পেসারদের এমন বেহাল অবস্থা কেন হবে?

আমাদের প্রাক্তন বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের সময়কালে ঠিক কেমন অবস্থায় ছিল দলের পেস অ্যাটাক। একবার সেই পরিসংখ্যান ঘেঁটে এলেই আসল চিত্র ফুটে উঠবে। যদিও বিসিবি’র অনেকেই তখন বলেছেন, স্ট্রিকের কাজের প্রতি তারা মোটেও সন্তুষ্ট নন। অথচ স্ট্রিকের পরিসংখ্যান কিন্তু একদম ভিন্ন কথা বলে।

স্ট্রিকের পর বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ হওয়ার দৌড়ে ছিলেন আকিব জাভেদ, চামিন্দা ভাস, শেন বন্ড, অ্যালান ডোনাল্ডসহ আরো অনেকে। যাদের সবারই কমবেশি কোচিং করানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোচ হিসেবে অনভিজ্ঞ ওয়ালশই হিথ স্ট্রিকের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন। যদিও জোর দাবি ছিল, উপমহাদেশের কাউকেই যেন মুস্তাফিজ-তাসকিনদের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওয়ালশ এখন রুবেল- আলামিনদের নিত্য সমস্যাগুলো কতটা বুঝতে পারছেন সেটাও একটা বিরাট প্রশ্ন। একইভাবে ফিজ বা তাসকিনরা কোচের সাহায্য নিয়ে নিজেদের সেরাটাই বা কেন বের করে আনতে পারছেন না, এটাও বড় চিন্তার বিষয়।

জাতীয় দলের পরবর্তী মিশন শুরু হতে এখনও প্রায় তিন মাস বাকি। এরইমধ্যে ফিজসহ জাতীয় দলের অন্য পেসারদের সমস্যাগুলো কতটুকু সমাধান ওয়ালশ করতে পারেন এটাই দেখার বিষয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :