হায় ডাক বিভাগ!

আজহারুল হক, গফরগাঁও
 | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৪৪

‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে’-তা যেভাবেই লিখুক চিঠি পৌঁছতে হবে কাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছে। বিজ্ঞান অগ্রসর হচ্ছে দ্রুত। ডিজিটালের আলোকবর্তিকা গ্রাম জনপদকেও প্রায় ছুঁইছুঁই। পরিবর্তনশীল এই সময়ের বাস্তবতাকে স্বীকার করেও একথা দ্বিধাহীন বলা যায়, আমাদের ঐতিহ্যর অন্যতম মাধ্যম ডাকঘরের আবেদন এখনো এতটুকু ফুরিয়ে যায়নি। যে কথা চিঠিতে ব্যক্ত করা যায়, যে আবেগের পাত্র চিঠিতে উবু করে ধরা যায় তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়। মোবাইলের কথাই আমরা ধরি না কেন, অনেক কথাই এর মাধ্যমে লেনদেন করা যায়। তারপরও চিঠির আবেদন চিরন্তন। কারণ চিঠিতে অকপটে অকথিত কথা প্রকাশ করা যায়।

একটি সময় ছিল ডাক পিয়নের হাঁক শোনার জন্যে বাড়ির মানুষজন উৎকর্ণ হয়ে থাকত। এখনো থাকে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই- সময়ের পালা বদলের সাথে ডাকঘর তার স্বকীয় অস্তিত্বকে পরিবর্তন করে গতিশীলতাকে আলিঙ্গন করতে পারেনি। পুরনো পোশাকেই আমাদের ডাকঘর জবুথবু অশীতিপর বৃদ্ধের মতো কোনো রকমে টিকে আছে। চিঠির বার্তা এখন প্রযুক্তির উৎকর্ষে মুঠোফোনের দখলে। হাতে হাতে মুঠোফোন চিঠি লেখার প্রয়োজনীয়তাকে গৌণ করে দিয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়গুলোতে দাপ্তরিক প্রয়োজনে এখনো চিঠি চালাচালি করতেই হয়। সরকারি ডাক বিভাগের উদাসীনতা আর কচ্ছপ গতির ফলে অকুস্থলে চলে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কুরিয়ার সার্ভিস। দ্রুততা ও বিশ্বস্ততার কারণে অতি অল্প সময়ে চিঠি আদান প্রদানে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকটাই তুলনামূলক সরকারি টেলিফোন কোম্পানির মতোই বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার দশায় পড়েছে।

অনেকেই মনে করে সরকারের নীতি নির্ধারণী জটিলতার কারণে হারাতে বসেছে ডাকঘর তার হৃত গৌরব।

অপরাপর অনেক জায়গার মতো ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়ও নেই বহুসংখ্যক ডাকঘরের নিজস্ব কার্যালয় বা ভবন। গফরগাঁও উপজেলা ডাকঘর ও কান্দিপাড়া সাব ডাকঘরসহ সর্বসাকুল্যে ৪৩টি ডাকঘর রয়েছে।

গফরগাঁও উপজেলা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার বজলুল বারী ঢাকাটাইমসকে জানান, গফরগাঁও উপজেলা ডাকঘর, কান্দিপাড়া সাব ডাকঘরসহ ৪৩টি ডাকঘর রয়েছে। তবে গফরগাঁও উপজেলা ডাকঘর, কান্দিপাড়া সাব ডাকঘরসহ রসুলপুর শাখা ডাকঘর, চরমছলন্দ শাখা ডাকঘর, কাঠালী ডিঙা শাখা ডাকঘর ও আনছার নগর শাখা ডাকঘরের কার্যালয় রয়েছে। বাকি ৩৭টি শাখা ডাকঘরের কোনো কার্যালয়ই নেই। এসব ডাকঘরের কার্যক্রম চলে সংশ্লিষ্ট পোস্ট মাস্টারের বাড়িতে বা স্থানীয় বাজারের কোনো দোকানে। যেসব শাখা ডাকঘরের কার্যালয় নেই সেগুলো হচ্ছে বারবাড়িয়া, চারিপাড়া, উত্তন্নপাড়া, নিধিয়ারচর, চরকামারিয়া, শিবগঞ্জ, আঠারদানা, পাঁচুয়া, দীঘা, মশাখালী, বীর খারুয়া, হোসেনশাহী, কান্দি, মুখী, উথুরী, মীর বাড়ি, দুগাছিয়া, মহির খারুয়া, পাঁচবাগ, হালিমাবাদ, লামকাইন, উস্থি, জায়েদাবাদ, লংগাইর, মাইজবাড়ি, সতেরবাড়ি, জয়ধরখালী, দত্তের বাজার, পাগলা, কুরচাই, নিগুয়ারী, ত্রিমোহনী, টাঙ্গাব, স্বল্প ছাপিলা, পূর্ব বাশিয়া, বারইহাটি, বাশিয়া ও সাদুয়া বাজার।

এসব শাখা ডাকঘরের কার্যালয় বা ভবন না থাকলেও ডাকঘরের কার্যক্রম দায়িত্বরত পোস্ট মাস্টারদের বাড়িতে কিংবা কোনো স্থানীয় বাজারে বসে চালিয়ে নিতে হচ্ছে।

এছাড়াও তিনি জানান, কার্যালয় না থাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডাক বিভাগকে যদি সময়ের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে ঢেলে সাজানো যায়, তাহলে একথা সন্দেহাতীত সত্য ব্রিটিশের করে যাওয়া এ বিভাগ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্জন করতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :