মিষ্টি না খেলেও যেসব অভ্যাস বাড়ায় ব্লাড সুগার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৬

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্বস্তি। গরমে বেশির ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে পারছে না। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার কারণে গোপনেই শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। ডায়াবেটিসও এমনই একটি রোগ, যার প্রধান কারণ আপনার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। চোখ, কিডনি, লিভার, হার্ট ও পায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিস প্রাণঘাতীও হতে পারে।

অনেকে মনে করেন, মিষ্টির প্রতি অগাধ ভালবাসাই ডায়াবেটিসের এক মাত্র কারণ। এ ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে মিষ্টি খেতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা। কারণ অত্যধিক মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তবে রোজের কিছু অভ্যাসেও ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে শরীরে। বাড়িতে কারও, বা নিজের ডায়াবেটিস থাকলে রোগের ঝুঁকি এড়াতে কোন কোন অভ্যাসে বদল আনবেন?

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করা। পানিতেই রয়েছে অনেক কিছুর সহজ সমাধান। ডায়াবেটিস মুক্ত থাকতে হলে পানিও পান করতে হবে বেশি। কাজের চাপে পানি পান করা হয়না অনেকের। সে জন্য চোখের সামনে পানির বোতল রাখুন। শরীরে আর্দ্রতার অভাবেই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

অনেকেই অফিস যাওয়ার তাড়ায় প্রাতরাশ না করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দীর্ঘ ক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে কিন্তু শরীরে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রাতরাশ করতে হবে পেট ভরে।

খুব বেশি রোদে পোহানোর ফলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সিডিসি অনুসারে, সানবার্নের কারণে ব্যথা হতে পারে, যার কারণে স্ট্রেস বাড়ে, এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে।

শরীরে অপর্যাপ্ত জলও রক্তে উচ্চ শর্করার কারণ। ডিহাইড্রেশনের কারণে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, যার ফলে ডিহাইড্রেশন আরও গুরুতর দিকে যায়।

ব্যস্ত জীবনে ঘুমের সঙ্গে আপস করেন অনেকে। অপর্যাপ্ত ঘুম নানা রোগবালাই ডেকে আনে। শরীর সুস্থ রাখতে যে পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন, তার চেয়ে কম হলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। ঘুম যাতে পর্যাপ্ত হয়, সে দিকে অতি অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি। ঠিকমত ঘুম না হলে হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে যার ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধের এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়। এ ছাড়া কম ঘুম হলে বেশি মিষ্টিযুক্ত খাবার খেতে ইচ্ছে করে যা সুগারের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে কাজ করলেও ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিসের। শরীর যত সচল রাখবেন, ততই ডায়াবেটিস দূরে থাকবে। এক জায়গায় বসে বসে কাজ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যত পারবেন শরীর সচল রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চ করুন। বসে বসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে একটু-আধটু হাঁটাচলা করে নিন। তার পরে না হয় আবার কাজে বসুন।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে ধূমপানের সঙ্গেও ডায়াবেটিসের যোগ রয়েছে। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে ধূমপানে রাশ টানুন।

মানসিক চাপের কারণেও ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হন অনেকে। কর্মক্ষেত্রে চাপ, বাড়িতে সমস্যা— চিন্তার জেরে বেড়ে যায় রক্তের শর্করার মাত্রা। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত যোগাসন করুন। মাঝেমধ্যে সময় বার করে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিন। মন ভাল রাখার চেষ্টা করুন।

স্বল্প প্রোটিনযুক্ত খাবার রক্তে ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রোটিনের মাত্রা কমে গেলেই সুগার বেড়ে যেতে পারে।

অ্যাস্পার্টাম বা সুক্রোলোজের মতো কৃত্রিম সুইটেনারগুলি সুগার বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে। তাই সুগার ফ্রি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। তা ছাড়া এই ধরনের দ্রব্য কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

কফি অনেকেরই অত্যন্ত প্রিয়। কফি প্রেমীদের কাছে সারা দিনে ৪-৫ কাপ, এমন কিছু ব্যাপার না। কিন্তু কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কি স্বাস্থ্যকর? সিডিসি-র মতে, কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একেবারেই ভাল নয়। এমনকি চিনি ছাড়াও স্বাস্থ্যকর নয়।

আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালের একটি আর্টিকেল অনুসারে, মাড়ির রোগ হলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। এর ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

বয়স বাড়লেও রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রক্ত প্রবাহে চিনির শোষণকে ধীর করতে সহায়তা করে, স্থিতিশীল রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কম ফাইবার এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট বেশি পরিমাণে খাবার বেশি খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবারেও বাড়ে সুগার। তেলের মধ্যে ক্যালোরি, ফ্যাট রয়েছে। এই ধরনের খাবারের সঙ্গে শরীরে দেখা দেয় ওবেসিটির সমস্যা। এখান থেকে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই ফাস্ট ফুড, তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

ভিটামিন সি যুক্ত সাইট্রাস ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কিন্তু যে সব ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি সেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিত নয়। আম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজের মতো ফলগুলো এড়িয়ে চলুন।

সুস্থ থাকতে চাইলে আজই মদ্যপান ত্যাগ করুন। অ্যালকোহলের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। এই ক্যালোরি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মদ্যপানে লিভারের ক্ষতি হয় ঠিকই, পাশাপাশি ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে যায়।

বেশ কিছু শারীরিক অবস্থার কারণে ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়। আবার বেশ কিছু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ রয়েছে যার মধ্যে স্টেরয়েড থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্টেরয়েড যুক্ত ওষুধ সেবনে বেড়ে যায় রক্তে শর্করার মাত্রা। তাই যে ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিন।

হরমোনের এই ধারাবাহিক ভারসাম্যহীনতা ডায়াবেটিসের জন্ম দিতে পারে। তাই হরমোনজনিত কোনও সমস্যা থেকে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শারীরিক পরীক্ষা না করানো। কয়েক মাস পর পর শারীরিক পরীক্ষা করানো সুস্থ থাকার নিয়মগুলোর মধ্যে পড়ে। কিন্তু অনেকেই সময়ের অভাবে শরীরের প্রতি অবহেলা করে থাকেন। ফলে শরীরের কোনও সমস্যা হয়ে থাকলেও তা সঠিক সময়ে ধরা পড়ে না। আর কিছু না হোক, মাঝেমাঝে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ডায়াবেটিস হলো কি না, তা জেনে নেওয়া জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/৩০ এপ্রিল/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :