রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:০৩ | প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:১৬
ফাইল ছবি

‘রোহিঙ্গা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে’ সরকারি দল আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট একটি জাতীয় সমস্যা। এই নিয়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না। আমরা চাই এ সংকট মোকাবিলা করতে।’

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আগ্রাসন। রোহিঙ্গাদেরকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে বলছি না। তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া হোক। পরবর্তীকালে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক।

সোমবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিশ্ব বিবেক যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাগ্রত তখন সরকার কোনো প্রকার প্রস্ততি গ্রহণ করছে না। আমরা যখন কথা বলতে শুরু করেছি তখন তারাও বলতে শুরু করেছে। আমরা নাকি রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি করছি। একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই- রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা কোনো রাজনীতি করতে চাই না।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশে মানুষ যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি নির্বাচনের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ঠিক সেইসময় নির্বাচনী আওয়াজ শুনতে পেরে সরকার ও তাদের লোকেরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের বন্দী করে নির্বাচনী কৌশল এখন থেকেই গ্রহণ করছে তারা। কিন্তু দেশের জনগণ তা কখনোই মেনে নেবে না। দেশবাসী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে।’

ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যারা বিষোদগার করছেন তারা নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখুন। বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী নেত্রীর নাম বেগম খালেদা জিয়া।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কাজও এত সহজে হবে না। তাই কঠোর আন্দোলনের জন্য প্রস্ততি নিতে হবে সবাইকে।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে খালেদা জিয়া যে চুক্তি করেছিলেন সেই চুক্তির মাধ্যমেই মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে হবে। যাতে রোহিঙ্গারা ফিরি গিয়ে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব পান।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেরিতে হলেও সরকারের কয়েকজন রোহিঙ্গাদের দেখতে যাচ্ছেন। ভালো কথা, আমরা জানি না তারা সেখানে কী করবেন।’

খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় সরকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই- আগামী দিনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন অন্তত এদেশের মাটিতে হবে না। আর তেমন কোনো নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে দেশের জনগণ সেই নির্বাচন মেনেও নেবেন না। হতেও দেবে না।’

স্থায়ী কমিটির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটিই- জাতিগোষ্ঠীকে নিধন করা। এ বিষয়ে সমগ্র বিশ্ব জাগ্রত হলেও বাংলাদেশের বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে চুপ করে আছে।’

খসরু বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার বলছে তারা সন্ত্রাস দমন করছে। আওয়ামী লীগ সরকারও বলছে রোহিঙ্গারা অস্ত্র নিয়ে আসতে পারে। এদের মাধ্যমে জঙ্গি আসতে পারে। একটি কথা স্পষ্ট- মিয়ানমার সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কথা বলার সুর এক। কারণ বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গির কথা বলে রাজনীতিকে ঘোলা করে ফের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সমগ্র বিশ্বের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তাই পাশ্ববর্তী দেশ কী বললো আর না বললো সেদিকে না তাকিয়ে সরকারের উচিত হবে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে আশ্রয় দেয়া এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া।’

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান; ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর বিএনপি (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ। সভার সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/এমএবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :