ইরানের দিকে ট্রাম্পের অগ্নিদৃষ্টি কতটা বাস্তবসম্মত

মোহাম্মদ জমির
 | প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৫০

ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তিনি বর্ণান্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদ তার মত ও পথ। কোনো আলোচনার ধার তিনি ধারেন না। যা বলেন তা করে দেখাতে চান। তারই জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়েছেন। অভিবাসীদের ওপর নিত্যনতুন খড়গ নিয়ে হাজির হচ্ছেন। নিজেকে একজন যুদ্ধবাজ হিসেবে জাহির করতেও জুড়ি নেই ট্রাম্পের। হালে উত্তর কোরিয়ার দিকে তার হিংস্রতা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। তবে তিনি ইরানকেও ছাড়তে রাজি নন। প্রথম থেকেই একহাত দেখাচ্ছেন।

সেই ধারাবাহিকায় গত ১৩ অক্টোবর ইরান নিয়ে তিনি যা বললেন তার মানে হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে পরমাণু বোমার সক্ষমতার অর্জনের পথ থেকে বের করে আনতে তিনি আর কোনো আলোচনায় রাজি নন। বহুপক্ষীয় এই উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনবেন। আলাপ-আলোচনা নয়, তিনি বরং চক্ষু গরম করে, হুমকি-ধামকি দিয়ে ইরানকে বশীভূত করার পক্ষপাতী। তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘নানা রকম উদ্যোগ নেওয়ার পরও ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি। তারা সবকিছু লঙ্ঘন করে আরো গতিময় পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দুর্বল নজরদারির সুযোগ নিয়েছে ইরান। এই কারণেই তারা পরমাণু অস্ত্রের দিকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের ঘোষণা মানেই ইরানের সঙ্গে আলোচনা থেকে সরে আসা নয়। তিনি বরং বল এখন মার্কিন কংগ্রেসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ট্রাম্প চাইছেন কংগ্রেস ৬০ দিনের মধ্যেই ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপের দিকে এগিয়ে আসে। তিনি বলছেন, ‘আমাদের কংগ্রেস ছাড়াও সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকেও বুঝতে হবে, যদি আলোচনায় কোনো সমাধান আশা করা না যায়, তবে তা বাতিল করা উচিত। এটি অবশ্যই নিরীক্ষা করে যেতে হবে, সাফল্য না এলে মার্কিনীরা তা থেকে সরে আসবে। এর জন্য যেকোনো সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এককভাবে প্রেসিডেন্টের কাছে আছে।’

মার্কিন নেতৃত্বে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরানের পরমাণু অস্ত্র নিবারণী আলাপ শুরুর পর তা নিয়ে চুক্তি হয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে, যা বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালে। এর মধ্য দিয়ে ইরানের ওপর থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রায় ওঠে যায়। অন্যরা এটা অনুসরণ করেছে। এই সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনায় নেতৃত্ব দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাবেদ জারিফ। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পুরোপুরিভাবে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের প্রধান উপকরণ ইউরেনিয়াম উৎপাদন থেকে সরে আসবে। এ বিষয়ক অন্যান্য উপকরণ উৎপাদনও হ্রাস করবে।

মার্কিন আইন অনুসারে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে প্রতি ৯০ দিন পর পর মার্কিন কংগ্রেসকে জানাতে হয় ইরান পরমাণু সমঝোতা মেনে চলছে কি না। ট্রাম্প এখন পর্যন্ত দুই দফা অবহিত করার কাজটি কংগ্রেসে করেছেন। সামনেই আরো একটি ধাপ আসতে যাচ্ছে। যদি ট্রাম্প সেখানে বলেন, ইরান এ সমঝোতা মেনে চলছে না তা হলে আন্তর্জাতিক এ সমঝোতা থেকে আমেরিকার বের হয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হয়ে যাবে। ১৩ অক্টোবরের বক্তব্যে ট্রাম্প যদিও সরাসরি এ সমঝোতা থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করে নেননি, তবে তিনি ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কি না তা বিবেচনা করার জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে দুই মাস সময় দিয়েছেন। ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা অনুসারে ইরানের ওপর থেকে এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।

ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে চুক্তি কখনোই ভালো চোখে দেখেননি। ২০১৬ সালে সেই নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকেই তিনি এর সমালোচনা করছিলেন। তখন তিনি চুক্তিটিকে নিকৃষ্টতম এক আপস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জোট ও তাদের মিত্রদের প্রতি এক ধরনের চপেটাঘাত। বরাবরই ট্রাম্পের একরোখা অবস্থানের সমালোচনা করে আসছে ডেমোক্র্যাট নেতারা। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে তাদের শীর্ষ নেতা ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের অবস্থানের মধ্যে ‘বিশাল ভুল’ দেখছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্টের বৈরী আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুনাম আজ ঝুঁকির মুখে বলে তিনি মনে করছেন।

ন্যান্সি পেলোসি আরো বলেছেন, ট্রাম্প খামখেয়ালিভাবে নিজে যা মনে করছেন, তাই করছেন। তিনি পারমাণবিক বিজ্ঞানী, জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, জনসাধারণ, নিজের মন্ত্রিসভা, এমনকি তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ পর্যন্ত তোয়াক্কা করছেন না। মুদ্রার অপর পিঠ দেখলে যা মিলছে তা হচ্ছে, যার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস।

চলতি মাসেই সিনেটে শুনানি হচ্ছে। যার উদ্দেশ্য ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির বিষয়টিকে নাকচ করতে যাতে জাতির আগ্রহে ভাটা থাকে। যদিও ইরানের সঙ্গে চুক্তিবিরোধীরাও শক্ত অবস্থানে আছেন। তারপরও এটি বাতিল করতে হলে কঠিন অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে ট্রাম্পকে। কারণ ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি কিছু রিপাবলিকান সিনেটরও তার বিরোধিতা করছেন। এর মধ্যে আছেন সিনেটর লিনডসে গ্রাহাম, যিনি এরই মধ্যে ট্রাম্পকে আহ্বান করেছেন যাতে চুক্তি বাতিলের বদলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিটিতে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করতে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

আমরা জানি, ২০১৫ সাল থেকেই জয়েন্ট কমপ্রেহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধে কাজ করছে। এক্ষেত্রে বিশদ পরিকল্পনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে কাজটি করতে চায় সংশ্লিষ্টরা। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ওপর থেকে প্রায় সব নিষেধাজ্ঞাই তুলে নিয়েছে। বিশ্ব দরবারের সদস্যরা পরমাণু নিরোধ বিষয়ে ইরানের সঙ্গে এক ঐকমত্যে পৌঁছান। যে চুক্তির পক্ষগুলো হচ্ছে ইরান ও পি-ফাইভ প্লাস ওয়ান গ্রুপ। যার মধ্যে আছে বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চায়না, রাশিয়া ও জার্মানি। অর্থাৎ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে একমাত্র জার্মানিই যুক্ত আছে।

এই চুক্তির শর্তমতে, ইরান উন্নততর সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ও ব্যবহার, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া এবং পারমাণবিক সরঞ্জামাদির গুদামজাত ও জাহাজীকরণ প্রভৃতি কার্যাবলীকে যথেষ্ট সীমিতকরণ করবে। ইরান ১৯ হাজার সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করে আগামী এক দশকে মাত্র ছয় হাজার ১০৪টি সেন্ট্রিফিউজ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাকি ১৩ হাজার অনুন্নত সেন্ট্রিফিউজ আইএইএর তদারকিতে সোপর্দ করতেও ইরান সম্মত হয়েছে। আগামী ১৫ বছরে ইরান কোনো রকম পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সুবিধা সৃষ্টি না করতে সম্মত হয়েছে। চুক্তির সময় ইরানের ‘ব্রেকআউট‘ সময়’ দুই-তিন মাস। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে রাষ্ট্রটির বর্তমানে দুই-তিন মাস সময় লাগবে।

এ সময়সীমা বৃদ্ধি করে আগামী ১০ বছরের জন্য এক বছর স্থির করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ১০ বছরের মধ্যে যদি ইরান পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়, তাহলে তার ব্রেকআউট সময় হবে দীর্ঘ ১২ মাস। ইরানের বর্তমান পারমাণবিক উপকরণ মজুদ আছে প্রায় ১০ হাজার কেজি, যা অসমৃদ্ধিকৃত। আগামী ১৫ বছরে তা কমিয়ে মাত্র ৩০০ কেজিতে আনতে ইরান রাজি হয়েছে।

অধিকন্তু সেই মজুদকৃত ৩০০ কেজি অসমৃদ্ধিকৃত ইউরেনিয়াম মাত্র ৩.৬৭ ভাগ পর্যন্ত সমৃদ্ধকরণে ইরান সম্মত হয়েছে। পঞ্চমত, ইরানের পারমাণবিক কার্যাবলী পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত নিখুঁত, শক্তিশালী কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অসংখ্য পর্যবেক্ষক চক্র ইরানের যেকোনো পারমাণবিক কার্যাবলী পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের এখতিয়ার রাখবে। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদল যেকোনো সময় ইরানের সামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারবে।

ট্রাম্প যাই বলুন না কেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ তার সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা মেনে চলছে তেহরান। আইএইএর মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো ১৮ সেপ্টেম্বর এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, পরমাণু সমঝোতার আওতায় ইরান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তেহরান তা বাস্তবায়ন করে চলেছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আইএইএর ৬১তম সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে আমানো ইরানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সংস্থার বার্ষিক অধিবেশনের পর থেকে আইএইএ অব্যাহতভাবে ইরানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি যাচাই ও পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তিনি বলেন, ইরান এখন বিশ্বের সবচেয়ে সুস্থ ধারার প্রমাণিত পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে। এর এক সপ্তাহ আগে আমানো আইএইএর বোর্ড অব গভর্নর্সের সভায়ও ইরানের পরমাণু প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি সত্তে¡ও ইরান পারমাণবিক চুক্তির পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছে বিশ্বশক্তিগুলো, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো আছে। ১৩ অক্টোবর ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরান ‘চুক্তিটি মেনে চলছে’ সে সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেননি তিনি। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি চুক্তিটিকে তাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের অংশীদারিত্বমূলক’ চুক্তি বলে অভিহিত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ‘কার্যকর একটি চুক্তিকে বাতিল করার বিষয়টি কোনো এক দেশের ওপর নির্ভর করে না।’ ট্রাম্পের ভাষণের পর কোনো মন্তব্য না করলেও এর আগে চুক্তিটি রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল চীন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে খেদ প্রকাশ করে বলেছে, এই চুক্তিটি কার্যকরের পথ রুদ্ধ করবে না বলে আশা করছে তারা। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বহুপাক্ষিক একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিকে একজন প্রেসিডেন্ট কি অকার্যকর করতে পারে? চুক্তিটি যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি না, মনে হচ্ছে তিনি এটি জানেন না।’

কিন্তু ১৩ অক্টোবর এক আক্রমণাত্মক ভাষণে ট্রাম্প ইরানকে ‘ধর্মান্ধ শাসনব্যবস্থা’ অভিহিত করে দেশটি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তোলেন। সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগে ইরানকে অভিযুক্ত করে দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন কোনো পথে চলতে পারি না ধারণাযোগ্যভাবে যা আরো সহিংসতা, আরো সন্ত্রাস এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার অত্যন্ত বাস্তব হুমকিতে পরিণত হতে পারে।’ ট্রাম্প এসব অভিযোগ করলেও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলেছে, ইরান চুক্তিটি পুরোপুরি মেনে চলছে।

তবে ডেমোক্র্যাটদের চরম বিরোধী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে এবং একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে ট্রাম্প ইরান বিরোধিতা অব্যাহত রাখবেন। এই বছরের গোড়ায় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে তার প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ ৩ ফেব্রুয়ারি ইরানের ১৩ নাগরিক ও এক ডজন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তখন জানায়। ইরান ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর দেশটির ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ট্রাম্প প্রশাসন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে লেখেন, ‘ইরান আগুন নিয়ে খেলছে- প্রেসিডেন্ট ওবামা তাদের প্রতি কতটা দয়ালু ছিলেন তা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। আমি তেমনটি নই!’ এর জবাবে ইরান তখন বলে, ‘একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির’ কাছ থেকে ‘অনর্থক’ আমেরিকান হুমকিতে তারা নতিস্বীকার করবে না। আবার তারও আগে গত ২৯ জানুয়ারি মাঝারি পাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় ইরান। এর মধ্য দিয়ে তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় হোয়াইট হাউস। এর প্রতিক্রিয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি তেহরান বলে, নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য চালানো এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তারা পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ করেনি।

ইরান নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের বড় শক্তি সৌদি আরব নিশ্চয় খুশি হবে। এই দুই দেশই ইরানের পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বাদশাহ সালমান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নিয়ে এই বছরের ২৯ জানুয়ারি ফোনালাপ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন।

ইরান যে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে, সেটা মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ট্রাম্প-সালমান উভয় একমত হয়েছেন। ‘মৌলবাদী ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবেলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া-ইয়েমেনে ‘সেফ জোন’ তথা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।

তবে এরপরও সৌদি আরবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সেভাবে হচ্ছে না। কারণ সিরিয়া, আইএস কাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ এক পরাশক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই কারণে ইরানও নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই ট্রাম্প প্রশাসন পছন্দ করুক আর না করুক, এই সময়ে এসে মধ্যপ্রাচ্য ও এর আশপাশ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইরান এক বড় খেলোয়াড় হয়েই থাকবে।

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :