রাশিয়ায় অনেক ইতিহাস হয়েছে, আজও হবে

আব্দুস সালাম মুর্শেদী
 | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৬:১৫

গত এক মাসের অনেক ঘটনা, দুর্ঘটনা, হাসি, কান্না, নাটক পেরিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ প্রহরে দাঁড়িয়ে। আর কিছু পরই নেমে পড়ছে দুই দল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। রাশিয়া বিশ্বকাপ গত এক মাসে অনেক ইতিহাস রচনা করেছে। সব শঙ্কা উড়িয়ে তুমুল সফল এবারের আয়োজন। নাম লিখিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। আজ রাতটাও হয়তো ইতিহাস গড়ার রাত।

ক্রোয়েশিয়া জিতলে তো সে এক মহা ইতিহাস। মাত্র ৪৭ লক্ষ মানুষের ছোট্র দেশ, অথচ কিন্তু গোটা দুনিয়ায় তারা ফুটবলের বিস্ময়। তাদের স্যালুট জানাই। ফ্রান্স এর আগেও বিশ্বকাপ জিতেছে। এবার জিতলেও হবে আরেক ইতিহাস। কোচ হিসেবে নতুন এক উচ্চতায় উঠে যাবেন দিদিয়ের দেশম। বেনকেবাওয়ারের পর দেশম হয়ে যাবেন খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা গর্বিত মানুষ। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি দলের অধিনায়ক ছিলেন। এবার কোচ হিসেবেও নজির গড়ার সামনে তিনি। ক্রেয়েশিয়ান কোচকেও আমি বাহাবা দিব। সবে গতবছর দলটির দায়িত্ব নিয়ে চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। ক্রোয়েশিয়ার আগে তিনি মধ্যপ্রাচের কয়েকটা দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। ৫১ বছর দারিচ বেশ ঠাণ্ডা মাথার কোচ।

ফ্রান্স না ক্রোয়েশিয়্? গত ক’দনি ধরে গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ও আলোচিত প্রশ্ন। একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে আমাকেও এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। হ্যাঁ, সব ধরনের ক্যালকুলেশন, বিশ্লেষণে ফ্রান্সকেই কিছুটা এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এটা এমন বিশ্বকাপ যেখানে কোনো ক্যালকুলেশন, হিসেব, প্রেডিকশনই টিকছে না। ফুটবল পণ্ডিতদের বেশিরভাগ কথাই উল্টে দিচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। তারপরও আমি ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখতে চাই। বড় কঠিন প্রান্ত থেকে তারা ফাইনালে ওঠেছে। শক্ত শক্ত প্রতিপক্ষকে ফেস করে তাদের এখানে আসতে হয়েছে। আর্জেন্টিনা, বেলজিয়ামের মতো দলকে তারা হারিয়ে এসেছে। অন্যদিকে তুলনামূলক সহজ পান্ত থেকে উঠে এসেছে ক্রোয়েশিয়া। তবে ক্রোয়েশিয়াকে আমি মোটেও ছোট করছি না। টানা তিনটা ম্যাচ তারা ১২০ মিনিট খেলে অসাধালণ স্ট্যামিনা, দলীয় একতার প্রমাণ দিয়েছে।

ফাইনালে ওঠাই ক্রোয়েশিয়ার জন্য অনেক বড় সাফল্য। তাদের মন্ত্রী পরিষদ জাতীয় দলের জার্সি পরে মিটিং করেছে। আসলে ক্রোয়েশিয়ার হারানোর কিছু নেই। তাদের উপর বাড়তি কোনো চাপ নেই। মাঠে তারা নির্ভার থাকতে পারবেন। কিন্তু চাপ থাকবে ফ্রান্সের উপর। কারণ রাষ্ট্র, ফুটবল শক্তি, ফুটবল ঐতিহ্য- সব দিক দিয়ে ফ্রান্স এগিয়ে। বড় ম্যাচে চাপ অনেক সময় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়, আমরা অতীতে যা দেখিছি। ফেবারিট হয়েও শেষ পর্যন্ত কাজ হয়নি।

এই ক্রোয়েশিয়া কারো ফেবারিটের তালিকায় ছিল না। কিন্তু তারা উঠে এসেছে। এর কৃতিত্ব কেবল তাদেরই। আসলে ভিতরে ভিতরে ক্রোয়েশিয়া যে দারুণ একটা দল, যেটা অনেকেই জানত না। মড্রিচ, মানজুকিচ, রাকিটিচ, সুবাসিচের মতো বিশ্ব মানের ফুটবলার তাদের দলে। কিন্তু জটিল নামের কারণে অনেকেই তাদের সেভাবে চিনতেন না। এবারের বিশ্বকাপে তাদের ভালো করে দেখেছে বিশ্ব।

কাগজে কলমে ফ্রান্স একটু এগিয়ে থাকলেও আমি মনে করি ফাইনাল হবে ফাইনালের মতো, উপভোগ্য। দুই দলেরই আছে গতি, ক্ষুরধার আক্রমণভাগ। দুর্দান্ত মিডফিল্ড। গ্রিসম্যান, এমবাপে, প্রগবা, জিরুড, উমতিতি, লরিস- কি সুন্দর লাইন আপ! এই ফ্রান্সকে এগিয়ে না রেখে আসলে পারা যায় না।

আমি চাই ফাইনাল ফাইনালের মতোই হোক। আর এ জন্য দরকার জলদি গোল। শুরুতে যদি গোল হয় তাহলে ম্যাচ ভালো জমে। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ অনেক বেশি হয়। ম্যাচ উপভোগ্য হয়। দুই দলই চাইবে ৯০ মিনিটে খেলা শেষ করতে। এ জন্য প্রথম দিকে গোল হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য শুরুতে গোল হলেও খেলা ১২০ মিনিট গড়াতে পারে ম্যাচ। কারণ গোলের পর গোল তো হতেই পারে।

১২০ মিনিট খেলা হলে ক্রোয়েশিয়া কি আজ পিছিয়ে থাকবে? হ্যাঁ, আমার কাছে তেমনটাই মনে হচ্ছে। যদিও গত ম্যাচে সময় যত গেছে, তত গতি বেড়েছে তাদের। তবে টানা তিনটে ম্যাচে ১২০ মিনিট খেলে কিছুটা যে ক্লান্ত ক্রোটরা- এটাও ভাবতে হবে। অবশ্য ক্রোটদের নিয়ে কোনো কিছুই বলা যায়। তাদের বিপক্ষে ভেবারিট বলে কোনো শব্দ আছে বলে হচ্ছে না। তারা যে অদম্য হয়ে ওঠেছে। সব মিলে ফাইনাল ফাইনালের মতোই হবে বলে আশা করি।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী : সাবেক তারকা ফুটবলার

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :