ইভটিজিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার

মো. গাউছুল আজম
 | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০১৮, ১৫:১৪

ইভটিজিং বলতে সাধারণত কোনো নারী বা কিশোরীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ভয় দেখানো, তার নাম ধরে ডাকা এবং চিৎকার করা,বিকৃত নামে ডাকা, কোনো কিছু ছুঁড়ে দেয়া, ব্যক্তিত্বে লাগে এমন মন্তব্য করা,যোগ্যতা নিয়ে টিটকারি করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাঁটতে বাধা দেয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছাড়া, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে পিছু নেয়া, অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন করা, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গান, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথ রোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে।

দণ্ডবিধি আইন, ১৮৬০ এর ৫০৯ ধারায় ইভটিজিং

যদি কোন কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে সে নারী যাহাতে শুনিতে পায় এমনভাবে কোন কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা সে নারী যাহাতে দেখিতে পায় এমনভাবে কোন অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্তু প্রদর্শন করে, কিংবা অনুরুপ নারীর গোপনীয়তা অনাধিকার লঙ্ঘন করে, তাহা হইল সে ব্যক্তি এক (১) বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদন্ডে কিংবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ এর ৭৬ ধারায় ইভটিজিং

যদি কেউ কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান হতে দৃষ্টিগোচরে স্বেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে নিজদেহ এমনভাবে প্রদর্শন করে যা কোন গৃহ বা দালানের ভেতরে থেকে হোক বা না হোক কোন মহিলা দেখতে পায় বা স্বেচ্ছায় কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো নারীকে পীড়ন করে বা তার পথ রোধ করে বা কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোন অশালীন ভাষা ব্যবহার করে,অশ্লীল আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্য করে কোনো মহিলাকে অপমান বা বিরক্ত করে তবে সেই ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে-

“সর্ব সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে”।

১৮৬০ সনের দণ্ডবিধি আইনের ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে-

যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায় বা সে তদ্বারা তার শালীনতা নষ্ট করতে পারে জেনেও তাকে আক্রমন করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে তাহলে সে ব্যক্তি ২ বৎসর পর্যন্ত যেন কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে বা জরিমানাদণ্ডে বা উভয়প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ (খ) ধারায় বলা হয়েছে-

যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর বা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বৎসর কিন্তু অন্যূন ৫ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হইবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ ধারা অনুযায়ী-

যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হইবেন। ধর্ষণ পরবর্তী নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম করাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উহার অতিরিক্ত অন্যূন ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে-

যদি কোন ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কার্যও করে অথবা কোন প্রকাশ্য স্থানে বা তার সন্নিকটে কোন অশ্লীল গান, গাঁথা, সংগীত বা পদাবলী গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে তাহলে সে ব্যক্তি ৩ মাস পর্যন্ত যে কোন ধরনের কারাদণ্ডে বা জরিমানাদণ্ডে বা উভয়প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কারা ইভটিজিং এর শিকার হয়?

কিশোরী মেয়ে, শিশু, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারী শ্রমিকরা, বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নারী কর্মচারী, কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ডাক্তারসহ সকল স্তরের নারীরা। ইদানীং পাবলিক পরিবহনেও নারীরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন।

ইভটিজিং বন্ধে কারা ভূমিকা রাখতে পারে-

 পরিবারের সদস্যগণ ও একে অপরকে সচেতন করতে পারেন।

 শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষিকাগণ।

 কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীগণ।

 রাস্তাঘাটে চলাচলকারী সাধারণ জনগণ।

 আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 বিজ্ঞ আদালত।

 ভ্রাম্যমাণ আদালত।

 জনপ্রতিনিধিগণ।

 সাংবাদিকসহ সকল সচেতন মানুষ।

ইভটিজিং প্রতিরোধ

১। ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ক্লাসরুমে ইভটিজিং সম্পর্কে আলোচনা করা এবং নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরা।

৩। গণমাধ্যমে ইভটিজিং উৎসাহিত হয় এ ধরনের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন, নাটক, কঠোরভাবে প্রচার না করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৪। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেতন ও কার্যকর করা।

৫। ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটলে ভিকটিম এর পাশে সকলকে দাঁড়ানো।

৬। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ইভটিজিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।

ইভটিজিংয়ের শিকার হলে কী করবেন?

ইভটিজিংয়ের শিকার হলে সাথে সাথে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ডায়াল করলে পুলিশি সহয়তা পাবেন। আপনার আশেপাশের র‌্যাব ব্যাটালিয়নে জানাতে পারেন। উপজেলা পার্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিতভাবে এবং সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করতে পারেন। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণকেও জানাতে পারেন। Report 2 RAB এই Apps এ জানাতে পারেন।

আশা করি ইভটিজিং এর প্রতিকার পাবেন। আসুন সবাই ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমাদের কন্যা, জায়া ও জননীদের পথ চলা নিরাপদ করায় সবাই এগিয়ে আসি।

লেখক: উপসচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :