মেজর মাহফুজের মানিকগঞ্জের বাড়িতে ‘শূন্যতা’

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে নিহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে মাটিচাঁপায় মারা গেছে চার সেনা সদস্য। এদের মধ্যে নিহত মেজর মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে। তার বাবা মোজাম্মেল হক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। নিজ জন্মস্থানে মেজর মাহফুজ না থাকলেও তার মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
সিঙ্গাইর উপজেলা থেকে তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে নিহত মাহফুজের বাড়ির দূরুত্ব চার কিলোমিটার। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায় একই জায়গায় নিহত মাহফুজের দাদা ও নানার বাড়ি। নানার বাড়িতে তার সেজো মামা মো. হান্নান পরিবার নিয়ে থাকলেও দাদার বাড়িতে রয়েছে সুনশান নিরবতা। একটি বিশাল ভিটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তালাবদ্ধ চারচালা টিনের ঘর। বাড়িতে দীর্ঘ দিনের পুরানো একটি পানির কুয়া থাকলেও ব্যবহারের অভাবে সেটি ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। বাড়ির ওঠানে রয়েছে বেশ কিছু কাঁঠাল গাছ। আর বাড়ির চারদিকে বাশের ঝাঁড়। বাড়িতে নিহত মাহফুজের পরিবারের কোনো সদস্য না থাকায় ওই বাড়িতে গেলে মনে হবে এটি একটি ভূতুড়ে বাড়ি। বাড়িতে যাবার সাথে সাথে ছুটে আসেন আত্মীয় স্বজনসহ আশপাশের মানুষ।
এ সময় মাহফুজের চাচাতো কাকা জাকির হোসেন খান সম্রাট কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকাটাইমসকে বলেন ছোট সময় মাহফুজের চলাফেরা দেখেই আমরা বুঝেছি সে বড় হয়ে দেশের একজন রত্ন হবে। যখন শুনলাম মাহফুজ সেনাবাহিনীর মেজর হয়েছে তখন ভাবলাম সে এখন দেশের রত্ন হয়েছে। আজ সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এটা ভাবতে অবাক লাগে। মাহফুজ মারা যাওয়ায় আমাদের এলাকার রত্ন হাড়িয়ে গেল।
একই এলাকার সমবয়সী রমজান খাঁন বলেন, মাহফুজ অসাধারণ একজন মানুষ ছিল। সে ছিল ছোট বেলা থেকেই প্রতিভাবান। সে মেজর হওয়ার আগ থেকেই এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছিলেন। এলাকার মসজিদ মাদ্রাসায় নিয়মিত সাহায্য সহযোগিতা করতেন। এতিমদের খাওয়াতে নিজ পকেট থেকে টাকা দিতেন। প্রতি ঈদে তাদের নতুন কাপড় দিতেন। কিন্তু সে আজ হাড়িয়ে যাওয়ায় আজ অসহায় দুঃস্থদের সাহায্য সহযোগিতা করার মত কোনো মানুষ রইলো না।
নিহত মেজর মাহফুজের আরেক কাকা জাকির হোসেন বলেন, বছরে একবার মানিকগঞ্জের ইরতা আসতেন মেজর মাহফুজ। দেশে এসে নানা, নানি ও দাদা দাদীর মৃত্যুর বাৎসরিক অনুষ্ঠান করতেন। অনুষ্ঠান শেষ হলেই আবার চলে যান ঢাকায়।
তিনি বলেন, যখন মাহফুজের সেনাবাহিনীতে চাকরি হলো তখন এলাকার মানুষ কতই না খুশি হয়েছিল। কিন্তু মাহফুজ মারা যাওয়ায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাহফুজের চাচাতো কাকী ফরিদা বেগম বলেন, নিহত মাহফুজ ছোট সময় পার করেছেন তালেবপুরের ইরতা গ্রামে। সেখানে অবস্থিত ইরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে ৫ম শ্রেণি শেষ করে বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে চলে যান ঢাকায়। এরপর ব্যাংক কলোনি হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করে ঢাকার মতিঝিল ক্যাডেটে ভর্তি হন। তিনি কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, মাহফুজ এভাবে মারা যাওয়ায় এলাকার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। আর চাঁচাতো বোন শবনম আক্তার জানান, মাহফুজ এমন একজন মানুষ ছিল, যে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে একদিনের জন্য আসলেই সব মানুষের খোঁজ খবর নিত। সেই মাহফুজ পৃথিবীতে নেই এটি যেন সপ্নের মতো লাগছে।
১৫ বছর আগে নিহত মাহফুজ কমিশনার র্যাংকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর প্রমোশন হয়ে সাত বছর আগে মেজর হন। গত ২ রমজান ৩০ মে রাঙ্গামাটি জেলায় বদলি হয়ে অস্থায়ী পোস্টিং হিসেবে যোগদান করেন মাহফুজুর রহমান। বিবাহিত জীবনে তিনি ৫ বছর বয়সের এক সন্তানের পিতা ছিলেন।
পরিবার থেকে জানিয়েছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিহত মাহফুজের ছোট বোন সোনিয়া আক্তার অস্টেলিয়া থেকে ফেরার পর ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/প্রতিনিধি/ইএস)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

১১০ কিলোমিটার রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে বাবা

পুত্রবধূ ধর্ষণের অভিযোগ শ্বশুর গ্রেপ্তার

ছিটকে পড়ে লাশ হলেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী

বাবাকে ইফতার পৌঁছে দিতে গিয়ে সড়কে প্রাণ গেল ছেলের

গাইবান্ধায় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে বৃদ্ধা নিহত

কুমুদিনীর সাবেক ডেন্ডাল সার্জন জামানের ইন্তেকাল

কুলিয়ারচরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, নিহত ১

আলফাডাঙ্গায় যুবককে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়ার হুমকি

বোয়ালমারীতে লকডাউন অমান্য করায় ছয় ব্যবসায়ীর জরিমানা
